ময়মনসিংহ-৯: দু’দলেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী

নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ময়মনসিংহ-৯। এ আসনে ১৯৯১ সালে প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তখন জয় পেয়েছিলেন বিএনপির আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত ভোটে বিজয়ী হন বিএনপির জহুরুল ইসলাম খান। তবে ১৯৯৬ সালের মূল নির্বাচন ও ২০০৮ সালের ভোটে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম।

২০০১ সালে বিজয়ী হন বিএনপির প্রবীণ নেতা খুররম খান চৌধুরী। সবশেষ ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী।

আসনটিতে বড় দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে। সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল হলে আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন সাংসদ হন। এরপর থেকেই দলে কোন্দল বাড়তে থাকে। একদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি ও সাবেক এমপি মে. জে. (অব.) আবদুস সালাম, অপরদিকে পূর্বের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের দলীয় কার্যক্রম আলাদা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপর দিকে বিএনপির সাবেক সাংসদ খুররম খান চৌধুরী ও তার ভাতিজা লন্ডন প্রবাসী তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ ইয়াসের খান চৌধুরী এবং সৌদি আরব বিএনপির পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি একেএম রফিকুল ইসলাম ও তার সহোদর সাবেক পৌরমেয়র এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুলের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য। তারা আলাদাভাবে পালন করে দলীয় কর্মসূচি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চৌধুরী স্বপন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আওয়ামী আইনজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হাই, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন মাস্টার ।

মনোনয়ন নিয়ে সাংবাদিকদের বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন জানান, এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তৃণমূলকে সংগঠিত করে দলীয় কর্মসূচি পালন, গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছি। চার বছরের মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিজয় ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ আসনে আমার বিকল্প নেই।

সাবেক সাংসদ মে. জে. (অব.) আবদুস সালাম জানান, নান্দাইলে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত ও জনমানুষের দলে পরিণত করেছি। এমপি থাকার সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে সার্বিক উন্নয়ন করেছি। সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে আশা করছি দলীয় মনোনয়ন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক চৌধুরী জানান, দল ও মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মনোনয়ন পেলে বিজয় শতভাগ নিশ্চিত বলে জানান তিনি।

অ্যাডভোকেট আবদুল হাই জানান, ২০০৮ সালে ঋণখেলাপির কারণে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ফলে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করি। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে মনোনয়নের বৈধতা পান আবদুস সালাম। এবার আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন মাস্টার জানান, সভা-সামবেশ ও দান-অনুদান অব্যাহত রেখেছি।

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খুররম খান চৌধুরী, সৌদি আরব বিএনপির পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক একেএম রফিকুল ইসলাম ও সাবেক এমপি আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ ইয়াসের খান চৌধুরী।

চারবারের সংসদ সদস্য খুররম খান চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। তৃণমূল আমার নেতৃত্বে সংগঠিত। দলকে শক্ত অবস্থানে রেখেছি। ধানের শীষ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আসনটি দলকে উপহার দিতে চাই।

বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, দেশে-বিদেশে দলকে উজ্জীবিত করার কাজে নিয়োজিত আছি। এলাকার শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দান-অনুদান অব্যাহত রেখেছি। নান্দাইলের মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। ধানের শীষ পেলে বিজয় নিশ্চিত।

তরুণদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির হাতকে শক্তিশালী করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধানের শীষ উপহার দিতে চান আরেক নেতা প্রযুক্তিবিদ ইয়াসের খান চৌধুরী।

বড় দুই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি। নান্দাইলে একাধিক স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, নান্দাইল উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল হাকিম ভূইয়ার ছেলে হাসনাত মাহমুদ তালহা পার্টির মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

হাসনাত মাহমুদ তালহা বলেন, নান্দাইলে আওয়ামী লীগের তীব্র কোন্দলের কারণে একমাত্র জাতীয় পার্টিকে এ আসন দেয়া হলে বিজয় সুনিশ্চিত।

Share this news on: