টাইমলাইন: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগমন ও সফলতা অনেকটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। কারণ ১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, খালেদা জিয়া তখন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। রাজনীতি নিয়ে চিন্তাধারা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানেও তাকে খুব একটা দেখা যেতো না।

প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে সাত্তারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

একদিকে দলীয় কোন্দল, অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতার এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগদান এই দুই পরিস্থিতিতে বিএনপি তখন অনেকটা ছত্রভঙ্গ, বিপর্যস্ত এবং দিশেহারা।

দল টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার পরামর্শ এবং অনুরোধে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া।

চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে গৃহবধু থেকে রাজনীতিক হয়ে উঠেন এই নারী-

১৯৪৫- আগস্ট ১৫, দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন (তার জন্ম তারিখ নিয়ে মতান্তর রয়েছে)।

১৯৬০- আগস্ট মাসে তৎকালীন ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের (ডাক নাম কমল) সাথে বিয়ে হয়।

১৯৬৫- খালেদা জিয়া স্বামীর সাথে পাকিস্তান যান।

 ১৯৬৯- মার্চ পর্যন্ত করাচিতে স্বামীর সাথে ছিলেন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন।

১৯৭১- মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর কিছু দিন আত্মগোপনে থাকার পর ১৬ মে ঢাকায় চলে আসেন।

১৭ মে- বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসা থেকে চলে যান।

২ জুলাই- সিদ্ধেশরীতে এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাক সেনারা তাকে দুই ছেলেসহ বন্দী করে।

১৬ ডিসেম্বর- দেশ স্বাধীন হলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সেনা নিবাস থেকে মুক্তি মিলে।

১৯৮১- ৩০ মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান জিয়াউর রহমান নিহত হন।

১৯৮২- ৩ জানুয়ারি নেতাকর্মীদের আহ্বানে বিএনপিতে যোগ দেন।

১৯৮৩- মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন।

১ এপ্রিল- দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়।

সেপ্টেম্বর- ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

২৮ নভেম্বর- এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রথম গ্রেপ্তার হন।

১৯৮৬- পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চালিয়ে যান।

১৯৮৭- খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম মেয়াদকাল

১৯৯১-২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।

১৯ মার্চ- পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

২ এপ্রিল- সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করতে সংসদে বিল উত্থাপন করেন।

একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন।

৬ আগস্ট- সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিলই পাশ হয়। 

প্রধানমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় মেয়াদকাল

১৯৯৬- ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন।

এপ্রিল- প্রবল গণআন্দোলনের মুখে সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হন।

বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের প্রথম মেয়াদকাল

১৯৯৬- সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

 প্রধানমন্ত্রীত্বের তৃতীয় মেয়াদকাল

২০০১- অষ্টম জাতীয় সংসদে জামাতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

২০০৪ - ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় বেগম জিয়ার অবস্থান ১৪তম ছিল।

২০০৫ সালে ২৯তম ও ২০০৬ সালে ৩৩তম ক্ষমতাবান নারী হিসেবে ফোর্বসের তালিকায় স্থান পান।

২০০৬- ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করেন।

২০০৭- সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে তারেক রহমানসহ গ্রেপ্তার হন।

২০০৮- ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে যান।

 

সেপ্টেম্বর ১১- হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন।

১৯৭২- অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে (ঢাকা সেনা নিবাস) ওঠেন খালেদা জিয়া।

১৯৮১- ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন।

২০১০ - ১৩ নভেম্বর বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। সরকারের দাবি তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন বল প্রয়োগ করে তাকে বের করে দেওয়া হয়।

২০১১- ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে তাকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশীকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।

২০১২- বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন।

আগস্ট- রাজ পরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন।

অক্টোবর- চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফর সম্পন্ন হওয়ার একদিন পর বিএনপি ঘোষণা দেয় যে চীনা নেতৃবৃন্দ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন সরকারের বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছেন।

একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান।

২০১৪- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে মামলা হয়।

২০১৬- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে মামলা হয়।

২০১৮- ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

২০১৯- ০৬ মার্চ কুমিল্লায় বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে করা মামলায় ছয় মাসের জামিন পান।

২০ মার্চ- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

 

৩১ মার্চ -কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে চেম্বার বিচারপতি।

০৫ জুন- কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ঈদ করেন। এদিন তার সাথে পরিবারের সাত সদস্য দেখা করতে যান।

১৮ জুন- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ঢাকায় করা দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন পান।

 

টাইমস/এএইচ/জেডটি

Share this news on: