সরেজমিনে ঢাকা-১২: কামালের সঙ্গে পাল্লায় সাকি

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টসহ আরও চারটি দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে প্রচারণায় সরব রয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। আর বাকি প্রার্থীদের প্রচারণা তেমন নজরে পড়েনি।

রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-১২ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

 

জানা গেছে, ঢাকা ১২ আসনটি উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই আসনের ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৮ জন। এবারের নির্বাচনে ওই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির নাসিরউদ্দিন সরকার (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান (আম), বাম গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (কোদাল) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শওকত আলী হাওলাদার (হাতপাখা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান মিয়া কামাল প্রচারণায় সরব হয়ে উঠলেও বাকিরা তেমন তৎপরতা দেখাতে পারছেন না। তবে দুই-তিন আগে থেকে প্রচারণার মাঠে নেমেছেন জোনায়েদ সাকি।

সরেজমিন রাজধানীর ফার্মগেট, তেজকুনি পাড়া, তেজতুরী পাড়া, কাওরান বাজার, বাংলামটর, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, সাতরাস্তার মোড়, মগবাজার এলাকায় গিয়ে দেখে গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে পুরো এলাকা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে সাটানো হয়েছে নৌকা মার্কার পোস্টার। তবে নৌকা মার্কার পোস্টারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জোনায়েদ সাকির কোদাল মার্কার পোস্টারও সোভা পাচ্ছে সর্বত্র। আর দুই এলাকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শওকত আলী হাওলাদারে হাতপাখা মার্কার পোস্টার সাটানো রয়েছে। তবে বিএনপির ধানের শীষ বা অন্যান্য দলের কোনো প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়েনি।

 

এদিকে হাতপাখা ও কোদাল মার্কার পোস্টার সাটানো দেখা গেলেও নির্বাচনী কোনো কার্যালয় দেখা যায়নি। তবে প্রতিটি মহল্লা, গলিতে, বাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনী কার্যালয় দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, কার্যালয়গুলোকে পোস্টার, লিফলেট দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি নির্বাচনী কার্যালয়ে রয়েছে টেলিভিশন। মাইক্রোফোন দিয়ে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে বাজানো হচ্ছে নির্বাচনী গান।

মগবাজার এলাকায় নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে আসা আসলাম মিয়া নামের এক ভোটার বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী। তাই নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিদিন অংশ নিচ্ছেন। প্রতিদিন সকালে তিনি নির্বাচনী কার্যালয়ে আসেন। বিকেল হলে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তিনি প্রচারণায় যান।

কলিম উল্লাহ নামের আরেক জন সাধারণ ভোটার বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন।

 

তাদের কাছে প্রার্থীদের প্রচারণার কথা জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় বেশি হয়। তবে কোনো কোনো এলাকায় জোনায়েদ সাকিও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।

হাতিলঝিল, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শের-ই-বাংলা নগর ও হাতিরঝিল থানাধীন একাধিক ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন হ্যাভিওয়েট প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়াও কিছু কিছু এলাকায় জোনায়েদ সাকিও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। তবে অন্য কোনো প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি বলে জানান তারা।

নির্বাচনী প্রচারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আবদুর রশিদ বলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তারা ভোটারের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে গঠন করা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা কমিটি। ওই কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় মতবিনিময় সভা, পথসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এছাড়াও কমিটির সদস্যরা ভোটারের কাছে বিগত ১০ বছরের উন্নয়নের কথা তুলে ধরছেন।

তবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, কোদাল প্রতীক নিয়ে প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যেক ভোটারের কাছে যাওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় সাটানো হয়েছে পোস্টার। তবে মাঝে মধ্যে কয়েকটি এলাকায় তার প্রচারণা কাজে বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

এদিকে একই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। তবে ভোটের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত ধানের শীষের কোনো পোস্টার সাটানো হয়নি। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদেরও কোনো এলাকায় প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন সমর্থক বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেই তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই কেউ ভয়ে প্রচারণায় নামছেন না। এছাড়াও একই কারণে এলাকায় কোনো পোস্টারও সাটানো হচ্ছে না বলে জানান তারা।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব অভিযোগ করে বলেন, আমার আসনে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে, প্রচারণা চালাতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। নেতাকর্মীদেরকে বাসায় না পেয়ে মহিলা সদস্যসহ পরিবারের লোকজনদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীকে না পেয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে কোনো সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না।

 

টাইমস/ কেআরএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024
img
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত Mar 28, 2024
img
বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ Mar 28, 2024
img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024