ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ

শোলাকিয়ার মাঠ। সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে প্রায় তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন।

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে।

ঐতিহাসিক এই মাঠ সৃষ্টি সম্পর্কে প্রচলিত জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে নিজস্ব সম্পত্তিতে এই মাঠের গোড়াপত্তন করেন শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ। তিনিই প্রথম এখানে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন। ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে তিনি এই অঞ্চলে এসেছিলেন।

আরও জনশ্রুতি আছে, অনেকদিন আগে এই মাঠে ঈদের জামাতে প্রায় সোয়া লাখ মুসল্লি হয়েছিল। পরবর্তীতে সোয়া লাখ কথাটিই পরিবর্তিত হয়ে শোলাকিয়া নামকরণ হয়।

অন্য আরেকটি মত হলো, মোঘল আমলে পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। এটাও শোলাকিয়া নামের একটি উৎস।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় হয়বত নগর দেওয়ান পরিবারের অন্যতম দেওয়ান মান্নান দাদ খান এই মাঠে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমিদান করেন। দেওয়ান মান্নান দাদ খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর অধঃস্তন বংশধর।

ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই ঈদগাহের বর্তমান আয়তন ৬.৬১ একর। এর পশ্চিম সীমারেখা উত্তর-দক্ষিণে ৩৩৫ ফুট এবং পূর্ব সীমারেখা উত্তর-দক্ষিণে ৩৪১ ফুট এবং উত্তর সীমারেখা পূর্ব-পশ্চিমে ৭৮৮ ফুট ও দক্ষিণ সীমারেখা পূর্ব-পশ্চিমে ৯৪১ ফুট দৈর্ঘবিশিষ্ট। শোলাকিয়ার পূর্বপ্রান্তে দুতলা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই ঈদগাহ মাঠটি চারপাশে উঁচু দেয়ালে ঘেরা হলেও প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সুবিধার্থে মাঝে মধ্যেই ফাঁকা রাখা হয়েছে। মাঠের ভিতরে রয়েছে ২৬৫টি সারি। প্রত্যেক সারিতে ৫শ জন করে দাঁড়াতে পারে। মাঠের ভিতরে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩২ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ঈদের জামাতের সময় আশপাশের সড়ক, খোলা জায়গা, স্কুল মাঠ এমনকি বাড়ির উঠান ও ছাদেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ফলে সংখ্যাটা তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।

ঈদুল ফিতরের সময় ঈদগাহ ও এর আশপাশ এক ভিন্ন পরিবেশের তৈরি হয়। মূল শহর থেকে ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। বহু দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকেও মুসল্লির আগমন ঘটে এখানে। বহু পর্যটক এই অভূতপূর্ব মহামিলনকে এক পলক দেখার জন্যও উপস্থিত হন। মুসল্লির এই সংখ্যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহর ব্যবস্থাপনার জন্য ৫১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। ঈদের নামাজের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড এই কমিটি করে থাকে।

এই মাঠের প্রাচীন রেওয়াজ হচ্ছে দফায় দফায় আকাশে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। ঈদের জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে ৩টি, তিন মিনিট আগে ২টি এবং এক মিনিট আগে ১টি গুলি ছোড়ার মাধ্যমে সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার সংকেত দেয়া হয়।

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে ঈশা খাঁ বাস সার্ভিস, বিআরটিসি বাসসহ কয়েকটি পরিবহন বাসে যেতে হবে কিশোরগঞ্জ। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সেখান থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে ১০ থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় সহজেই পৌঁছা যাবে শোলাকিয়া মাঠে।

এছাড়া ঢাকা থেকে সকালে এবং সন্ধ্যায় এগারোসিন্দুর আন্তঃনগর ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়া যায়। শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। সেখান থেকে মাত্র ১৫/২০ টাকার রিকশা ভাড়ায় যাওয়া যাবে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।

থাকা ও খাওয়া: থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য  ক্যাসেল সালাম, হোটেল শ্রাবনী, হোটেল উজানভাটি, গাংচিল, হোটেল আল-মোবারক। এছাড়া খাবার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

 

 

Share this news on: