নয়নাভিরাম কুলুমছড়া ঝর্ণা

প্রকৃতিকন্যা সিলেট বরাবরই পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য পছন্দের জায়গা। এখানকার শান্ত-শীতল আবহাওয়া, অপূর্ব পাহাড়, হ্রদ আর ঝর্ণার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয় সকল প্রকৃতিপ্রেমীদের। তাই ভ্রমণ প্রেমীরা সুযোগ পেলেই ছুটে যান সিলেটে আর মন ভরে উপভোগ করেন অপরূপ সিলেটের রূপ। এখানকার ঝর্ণাগুলোর সৌন্দর্যও চোখ ধাঁধানো। ঝর্ণা প্রেমীদের তাই আদর্শ এক ভ্রমণ গন্তব্য হলো সিলেট। তেমনই সিলেটের অনন্য সুন্দর এক সীমান্ত ঘেঁষা ঝর্ণা হলো কুলুমছড়া।

সিলেট বেড়াতে গেলে একটা আফসোস প্রায় সবারই হয়। এত সুন্দর সব ঝর্ণা, বেশির ভাগই ভারতের সীমানায় পড়েছে। আমরা শুধু দূর থেকে দেখতে পাই। কুলুমছড়া ঝর্ণাটাও তেমনি।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনার হাট সীমান্তবর্তী কুলুমছড়া একটি গ্রাম। কুলুমছড়া গ্রামে অবস্থিত বলেই এর নাম কুলুমছড়া। এখানে ভারত সীমান্তের ঝর্ণাটিই কুলুমছড়া ঝর্ণা নামে পরিচিত। মেঘালয় থেকে বয়ে আসা ঝর্ণার পানি থেকে এই কুলুমছড়া এর উৎপত্তি। কুলকুল শব্দে বয়ে চলে বলেই হয়ত এই নদীঘেরা প্রান্তরের নাম কুলুমছড়া। তার সঙ্গে পাথরের গভীর সখ্য। নির্জনতার যেখানে রয়েছে ভাষা। মেঘালয় সীমান্তের এই ঝর্ণাটি আমাদের দেশে এসে ছড়া হয়ে গেছে, তাই এর নাম হয়েছে ‘কুলুমছড়া’। ভরা বর্ষা কুলুমছড়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কুলুমছড়ার চারপাশটা অসম্ভব সুন্দর। ঝর্ণার কুলকুল ধ্বনি কানে আসবে। নৌকা ছেড়ে জংলাপথ ধরে হাটলে দেখা যায় ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে তীর বেগে ছুটে আসছে ঝর্ণার পানি।

এখানে ঝরনার পানির স্বচ্ছ স্রোত বয়ে চলে প্রবল বেগে। স্বচ্ছ এই জলরাশি আপনার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। এই ঝর্ণার বুকে মনের আনন্দে জলকেলি করে নিমিষেই হয়ে উঠবেন সজীব ও প্রাণবন্ত। তবে এখানে এলে এবং গোসলের সময় সাবধান থাকতে হবে। কারণ ঝর্ণায় পানির প্রবল স্রোত থাকে আর সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় আপনাকে ঘুরতে হবে সাবধানে।

এখানে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, অর্কিড, ভেষজ গাছ-গাছড়ার দেখা পাবেন। কুলুমছড়া ঝরনা দেখার জন্য সকাল সকাল যাওয়াই ভালো। আর সন্ধ্যার আগেই ফেরত আসা উচিত। কেননা, এখানে চড়াই ভাঙতে বেশ কষ্ট হয়। আর সীমান্ত এলাকা বলে দিনের আলো ফুরিয়ে আসার আগেই ফিরে আসুন।

কখন যাবেন: 

মধ্য জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কুলুমছড়া বেড়ানোর অনুকূল সময়। সবচেয়ে ভালো সময় জুলাই থেকে অক্টোবর মাস।

যাওয়ার উপায়:

বাস: ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। বাস গুলো সকাল থেকে রাত ১২.৪৫ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেড়ে যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ও এনা পরিবহনের বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।

ট্রেনে: ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪ টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা।

আকাশপথে: ঢাকা থেকে বিমানযোগেও সিলেট যেতে পারেন। এজন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউএস বাংলা এয়ার, নভো এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ারের বিমানে করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়া যাবে।

সিলেট থেকে কুলুমছড়া:

সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপার নামক জায়গা পর্যন্ত গেলে ভাল হয়। পাঁচজন মিলে ১৫০০ - ২০০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেওয়া হয়। তবে মানুষ কম থাকলে ৮০-২০০ টাকা জনপ্রতিও যাওয়া যায়। হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না। মোটামুটি সবকিছুই পাবেন। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়। হাদারপার বাজারেই বিছনাকান্দি-কুলুমছড়া-পান্থুমাই–লক্ষনছড়া যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। সুন্দর বেশভূষা দেখে মাঝিরা ৩০০০ টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ১১০০-১৫০০ টাকা হলে ভাল।

নৌকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে ০১৭১২৯৭২৫৯৮।

কোথায় থাকবেন:

সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল - হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে। হোটেল অনুরাগ - এ সিঙ্গেল রুম ৪০০ টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা (নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০- টাকা থেকে ৫০০০- টাকা পর্যন্ত।

শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)।
দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)।
ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)।
বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)।
নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)।
জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)।
লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)।
আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)।
দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)।
হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)।
জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)।
তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।

তামাবিল/জৈন্তাপুর এর দিকে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। আপনার থাকার ব্যবস্থা যদি এইদিকে কোথাও হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে হাদারপার থেকে আবার আগের মতই গোয়াইনঘাটে আসতে হবে। গোয়াইনঘাট থেকে যেতে হবে সারি ঘাট। সিএনজি/লেগুনাতে করে যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা।

কোথায় খাবেন:

খাওয়ার জন্য সিলেটে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী একটিতে খেয়ে নিতে পারেন।

 

টাইমস/এমএএইচ/এইচইউ

Share this news on: