পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

মৌন পাহাড়রাজি, সাগরের কল্লোল, কর্ণফুলীর কলতান হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপুল বৈভব নিয়ে চট্টগ্রাম। এ নগরে বন্দরের আকর্ষণে ছুটে এসেছে এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকার নাবিকরা, এসেছে ভ্রমণ পিয়াসু পর্যটক, অনেকে বাঁধা পড়েছে এখানকার জীবন ও জীবিকার সাথে, ঘর বেঁধেছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি জীবনাচার নগর জীবনকে ঐশ্বর্য দিয়েছে, বিচিত্র সংস্কৃতির উদ্ভাবন চট্টগ্রামের পরিচিতিকে পৃথক মর্যাদা দিয়েছে। পর্যটন নগরী হিসেবেও রয়েছে চট্টগ্রামের আলাদা ঐতিহ্য। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।

চট্টগ্রাম শহরের জিরোপয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গা। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এর প্রচুর ক্ষতি হয়। বর্তমানে বাঁধ দিয়ে রক্ষাণাবেক্ষণ করায় সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়েছে। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঁচড় যেন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে।

পতেঙ্গা বীচে সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য মনকে আরো বেশি পুলকিত করবে। পাবেন ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে চড়ার সুযোগ। সেই সাথে আছে স্পিডবোড কিংবা কাঠের তৈরি নৌকা অথবা সী-বাইকে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা। সাধারণত বিকেল গড়াতে থাকলে জোয়ার আসতে শুরু করে। জোয়ার শুরুর আগে বাঁধ অনেকটা তলিয়ে যাবে। তীরে এসে পড়বে ঢেউ।

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যেতে হলে আগে আপনাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।

বাসে করে চট্টগ্রাম: ঢাকা থেকে সড়কপথে টি আর ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ৯৫০ থেকে ১,২৫০ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ মানের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

রেলপথে চট্টগ্রাম: রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ছাড়ে রাত এগারোটায়। শ্রেণি ভেদে ভাড়া ১৩৫ থেকে ১,০৯৩ ভাড়া।

আকাশ পথে চট্টগ্রাম: ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় চট্টগ্রামে।

এছাড়া দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দমত বাসে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসতে পারেন। 

চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা: চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান কিংবা জিইসি মোড় থেকে খুব সহজে সৈকতে যাওয়া যায়। সি-বিচ লেখা বাসগুলোতে চেপে বসলেই সৈকতে নামিয়ে দিবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে অটোরিক্সায় করে যেতে চাইলে ভাড়া নিবে ২০০-২৫০ টাকা। সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক।

থাকার ব্যবস্থা: সৈকতের কাছে থাকার জন্য মনোরম জায়গা বাটারফ্লাই পার্ক রেস্টহাউস। ভাড়া চার হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। ফোন- ০১১৯৫০১০৫০০। এছাড়াও থাকার জন্য চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেল হচ্ছে- হোটেল গোল্ডেন ইন (০৩১-৮১৩৫৯৮/৭২৭২৯৯), হোটেল টাওয়ার ইন ইন্টা: লি (০৩১-৮৪২৬৯১-২), হোটেল লর্ডস ইন প্রা: লি (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪), হোটেল সিলমুন প্রা: লি (০৩১-৬২৮৩০২/৮৪০৭৫৫), সেঞ্চুরি পার্ক লি (০৩১-২৫৫০৩১৩), হোটেল প্যারামাউন্ট, (০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪), হোটেল এশিয়ান এস আর (০১৭১১-৮৮৯৫৫৫), হোটেল সাফিনা (০৩১-০৬১৪০০৪), হোটেল নাবাইন (০১৭৫৫৫৬৪৩৮২), হোটেল ল্যান্ডমার্ক (০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭)

কোথায় খাবেন: পতেঙ্গায় খাবার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। আর যদি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখতে চান তবে আপনার জন্য রয়েছে সুখবর! ঐতিহ্যবাহী খাবারে চট্টগ্রাম বেশ সমৃদ্ধ। আর এ জন্য চলে যেতে পারেন হোটেল জামান-এ। আর মেজবানি খেতে চাইলে চলে যেতে পারেন চকবাজারে অবস্থিত ‘মেজবান হাইলে আইয়্যুন’ রেস্তোরায়। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে ছড়িয়ে আছে বেশকিছু ভাল মানের রেস্টুরেন্ট এদের মধ্যে বারকোড ক্যাফে, মিলেঞ্জ রেস্টুরেন্ট, গ্রিডি গাটস, ক্যাফে ৮৮, সেভেন ডেইজ, ধাবা, হান্ডির নাম, গলফ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কোষ্টাল মারমেইড রেস্টুরেন্ট এন্ড লাউঞ্জ, বোনানজা পোর্ট রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

অনান্য দর্শনীয় স্থান: সৈকতে যাওয়ার পথে শাহ আমানত (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিএনএস ঈশাঁখা (বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি) এবং চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি দেখতে পারেন। সবগুলো কাছাকাছি হওয়ায় আলাদা করে যাওয়ার ঝামেলা নেই। সৈকতে আছে বার্মিজ মার্কেট। সেখানেও ঘুরে ফিরে পছন্দের কেনাকাটা সেরে নিতে পারেন।

সতর্কতা:

• পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ খুব বেশি নয় এবং এখানে সমুদ্রে সাঁতার কাটা ঝুঁকিপূর্ণ।

• সৈকতে ঘুরতে গিয়ে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে দলবেঁধে যাওয়াই ভালো।কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে সৈকতের ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন।

• তবে অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকটায় থাকাই শ্রেয়। সৈকতে বেড়াতে গেলে নিজস্ব ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন। কেননা একাকী ভ্রমণে গেলে সৈকতে থাকা ভ্রাম্যমাণ ফটোওয়ালাদের কাছে ছবি তুলতে না যাওয়াই ভালো।

• স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়ুন আগেভাড়া শুনে নিলে ভালো হয়।

 

টাইমস/এএস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024
img
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ Mar 28, 2024
img
বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: ম্যাথিউ মিলার Mar 28, 2024
img
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত Mar 28, 2024
img
নিষেধাজ্ঞার ৩ দিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত Mar 27, 2024