ভারতের কোকিলা সরোজিনী নাইডু

সরোজিনী নাইডু। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সংগ্রামী সৈনিক। বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি। ভারতীয় কংগ্রেসের প্রথম নারী সভাপতি। তাকে বলা হয় ‘দ্য নাইটেঙ্গেল অব ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতের কোকিলা’।

১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হায়দ্রাবাদের একটি বাঙালি হিন্দু পরিবারে সরোজিনী নাইডুর জন্ম। তার পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার (সাবেক বিক্রমপুর জেলা) ভ্রাহ্মনগাঁও গ্রামে।

তার বাবা অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করার পর হায়দ্রাবাদে স্থায়ী হন। আর মা বারদা সুন্দরী দেবী বাংলার একজন বিখ্যাত কবি ও বিপ্লবী। সরোজিনী নাইডু খুব মেধাবী ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি মেট্রিক পাস করেছিলেন।

মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করার পর নিজাম চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সহযোগিতায় উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে চলে যান। প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ ও পরে ক্যামব্রিজের গার্টন কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি লন্ডনের রয়্যাল লিটারেরি সোসাইটির সদস্য ছিলেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সূচনাপর্বে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

১৯১৫-১৮ সময়ে তিনি ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন এবং সমাজকল্যাণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয়তাবাদের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। ১৯১৭ সালে ভারতীয় নারী সংঘ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন তিনি।

১৯২৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নাইডু। ১৯২৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয় কংগ্রেসেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ ভারতে প্লেগ মহামারির সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপব্রিটিশ সরকার তাকে ‘কায়সার-ই-হিন্দ’ পদকে ভূষিত করেছে।

১৯৩১ সালে মহাত্মা গান্ধী ও মদনমোহন মালাভিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা গোলটেবিল বৈঠকে মিলিত হন। ১৯৩০ সালে বৃটিশরা লবণ আইন প্রণয়ন করলে এর বিরুদ্ধে লংমার্চ করেন গান্ধী। এ আন্দোলনে অংশ নেয়ায় গান্ধী, নেহরু, মদনমোহন ও অন্যান্যদের সঙ্গে কারাবরণ করেন সরোজিনী নাইডু।

গান্ধীর আহবানে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ও জেলে গিয়েছেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনের সময় তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়েছিল।

ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি উত্তর প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে জীবনের পুরোটা সময় তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন নাইডু। তার লেখা ফার্সি ভাষার গ্রন্থ ‘মাহের মুনির’ হায়দ্রাবাদের নবাবকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

১৯০৫ সালে তার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য গোল্ডেন থ্রেশহোল্ড’ প্রকাশিত হয়। রাজনীতিবিদ গোপাল কৃষ্ণ গোকলসহ অনেকেই তার কবিতার ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। ১৯৬১ সালে তার লেখা আরেকটি কাব্য ‘দ্য ফিদার অফ দ্য ডাউন’ প্রকাশ করেন তার মেয়ে পদ্মজা নাইডু।

তার লেখা আরও কিছু গ্রন্থ দ্য বার্ড অফ টাইম, দ্য ব্রোকেন উইং, মোহাম্মদ জিন্নাহ অ্যা অ্যাম্বাসেডর অব ইউনিটি, দ্য স্কেপচার্ড ফ্ল্যুট, দ্য ইন্ডিয়ান উইভার্স ইত্যাদি।

১৯৪৯ সালের ২ মার্চ মারা যান দেশপ্রেমিক ভারতের কোকিলা সরোজিনী নাইডু।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৬০০ মিটার দৌড় : দুই তারকা ক্রিকেটারসহ অনুপস্থিত পাঁচ Apr 20, 2024
img
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ, যশোরে রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি Apr 20, 2024
img
লেবুপানি খাবেন যে কারণে Apr 20, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.৩, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু Apr 20, 2024
img
সর্বোচ্চ বাড়িয়ে কমল স্বর্ণের দাম Apr 20, 2024
img
উপজেলা নির্বাচনকালে আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ : কাদের Apr 20, 2024
img
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন : ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৭ Apr 20, 2024
img
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা Apr 20, 2024
img
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা : জাতিসংঘ Apr 20, 2024
img
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল Apr 20, 2024