প্রতিভাবান সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হক

বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে যেসব বাঙালি মুসলমান মননশীল গদ্য লেখক বিশিষ্টতা অর্জন করেন, কাজী ইমদাদুল হক তার মধ্যে অন্যতম। শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর তৎকালীন মুসলমান সমাজে তিনি এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিভার অধিকারী হয়ে সাহিত্য অঙ্গন আবির্ভূত হন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রবন্ধকার, উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক।

সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালের ৪ নভেম্বর খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী ইমদাদুল হকের পিতা আতাউল হক। তিনি প্রথমে আসামে জরিপ বিভাগে চাকরি করতেন। পরে তিনি মুক্তার পাশ করে খুলনা ফৌজদারি আদালতের আইনজীবী ছিলেন। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন পিতার একমাত্র সন্তান।

কাজী ইমদাদুল হককে ১৮৯৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাস করেন। ১৮৯৮ সালে কলকাতা মাদরাসা থেকে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ডিগ্রি ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থতার কারণে অনার্স পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি পরীক্ষার আগেই বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে নির্বাচিত হয়ে ১৯০৩ সালে কলকাতা মাদরাসার অস্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করেন।

পরে দেশে ফিরে এসে শিক্ষা বিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভূগোলের অধ্যাপক, ঢাকা বিভাগে মুসলিম শিক্ষা সহকারী স্কুল পরিদর্শক, কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ঢাকা বোর্ডের সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক। তিনি নবনূর, মাসিক শিক্ষক পত্রিকা, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
এই পত্রিকা ছাড়াও তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিতে তিনি সভাপতি ছিলেন।

১৯০৪ সালে খুলনা শহরে মৌলভী আব্দুল মকসুদ সাহেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা সামসন্নেসা খাতুনকে বিয়ে করেন। কাজী ইমদাদুল হকের চার পুত্র ও ২ কন্যা- কাজী আনারুল হক, কাজী সামছুল হক, কাজী আলাউল হক, কাজী নুরুল হক এবং কন্যা জেবুন্নেছা ও লতিফুন্নেছা।

কাজী ইমদাদুল হক ছাত্রজীবনে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তার সাহিত্য জীবনে সূত্রপাত ঘটে কবিতা রচনার মধ্যে দিয়ে। তার প্রথম সাহিত্যকর্ম ৯টি কবিতা সংগ্রহ আঁখিজল ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সালের সূচনালগ্ন থেকে নবনূর প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকাসহ প্রভৃতি পত্রিকায় তার কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১৮ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এ সমিতির মুখপত্র বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯২০ সালে কাজী ইমদাদুল হক শিক্ষক ও শিক্ষাবিষয়ক মাসিক পত্রিকা শিক্ষক প্রকাশ করেন।

কাজী ইমদাদুল হক কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস ছিলো আবদুল্লাহ। তার গ্রন্থসমূহের মধ্যে আঁখিজল, মোসলেম জগতে বিজ্ঞান চর্চা, ভূগোল শিক্ষাপ্রণালী (দু'খণ্ড), নবীকাহিনী, প্রবন্ধমালা, কামারের কাণ্ড, আবদুল্লাহ, আলেক্সান্দ্রিয়ার প্রাচীন পুস্তকাগার, আবদুর রহমানের কীর্তি, ফ্রান্সে মুসলিম অধিকার, আলহামরা, পাগল খলিফা ছিলো অন্যতম।

শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন কাজে অসামান্য দক্ষতা, গভীর দায়িত্ববোধ ও উদ্ভাবনী শক্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯১৯ সালে খান সাহেব উপাধিতে ভূষিত করেন ও ১৯২৬ সালে তাকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে।

খ্যাতিমান সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হক ১৯২৬ সালের ২০ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on: