থমাস জেফারসন: মার্কিন স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রপথিক

মার্কিন মুল্লুকে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬)। ১৭৪৩ সালের ১৩ এপ্রিল ভার্জিনিয়ার শ্যাডওয়েল শহরে তাঁর জন্ম। ১৪ বছর বয়সে বাবা পিটার জেফারসনকে হারান তিনি। এ অল্প সময়েই বাবার কাছ থেকে লাভ করেন প্রকৃত শিক্ষা, উন্নত রুচিবোধ ও সাংস্কৃতিক চেতনা। ছাত্রজীবন থেকেই মেধাবী ছিলেন টমাস। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করলেও তার গভীর আগ্রহ ছিল বিজ্ঞান ও দর্শনে।

রাজনীতির সঙ্গে টমাস জেফারসন যুক্ত হন ১৭৬৯ সালে। তখনো আমেরিকা ব্রিটিশদের অধীনে। রাজনীতিতে জড়িত হয়েই তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা শুরু করেন। ১৭৭৫ সালে এক সম্মেলনে আমেরিকার স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রেখে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি।

মহাদেশীয় কংগ্রেসের একজন নিবেদিত সদস্য হিসেবে তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের খসড়া রচনা করেন। ১৭৭৬ সালে ভার্জিনিয়া হাউসের সদস্য হিসেবে তিনি সামন্ততান্ত্রিক ভোগদখল ব্যবস্থার রদ এবং চার্চ ও রাষ্ট্রকে পৃথক রাখতে ব্যাপক সংস্কারেও ভূমিকা রাখেন।

১৭৭৯ সালে থমাস জেফারসন ভার্জিনিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন। কিন্তু সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমাদ্ধতা ও নির্বাহী দক্ষতার অভাবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১৭৮১ সালে ভার্জিনিয়ায় আক্রমণ করে বৃটিশরা। পরে তিনি পদত্যাগ করেন এবং স্ত্রী মার্থা ওয়েল স্কিলটনকে নিয়ে মস্টিসলে পরিবারের কাছে চলে যান।

এ আক্রমণ থেকে পালিয়ে এসে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। অভিমানে রাজনীতি থেকে সরেও দাঁড়ান। তবে ফিরে আসেন অল্প দিন পরই। ১৭৯৬ সালে তিনি আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এসময় তিনি প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস কর্তৃক গৃহীত বিদেশি ও সরকার সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক শরিক আইনের কঠোর বিরোধিতা করেন।

১৮০১ সালে তিনি অ্যাডামসকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার সময়েই ১৮০৩ সালে ফ্রান্সের থেকে লুইসিয়ানা অঙ্গরাজ্য কিনে আমেরিকা। ১৮০৪ সালে তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এসময় ইউরোপে নেপোলিয়ানীয় যুদ্ধে জড়ানো থেকে আমেরিকাকে বিরত রাখেন।

শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ থাকায় ১৮০৯ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা ও বিজ্ঞান থেকে শুরু করে স্থাপত্য ও সংগীতে ছিল তার গভীর আগ্রহ ও দক্ষতা।

১৮২৬ সালের ৪ঠা জুলাই আমেরিকার ৫০তম স্বাধীনতাবার্ষিকীর দিনে জেফারসন ও তাঁর বন্ধু জন অ্যাডামস মারা যান। তাঁর ইচ্ছাতেই সমাধিস্তম্ভের স্মৃতিফলকে কোথাও লেখা হয়নি তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে উল্লেখ রয়েছে, তিনি আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ও ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: