বিংশ শতাব্দীর শীর্ষ মানবাধিকার কর্মীদের অন্যতম একজন হেলেন কেলার। কেলার একজন আমেরিকান লেখক, রাজনৈতিক কর্মী, বক্তা ও সমাজকর্মী। তিনিই প্রথম অন্ধ ও বধির ব্যক্তি যিনি স্নাতক পাশ করেছিলেন।
হেলেন কেলার আমেরিকার সোসালিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করেছেন এবং নারীর দূর্ভোগ, শ্রমিক অধিকার, সমাজতন্ত্র ও সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে জনমত গঠনে কাজ করেছেন।
১৮৮০ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা শহরে হেলেন কেলারের জন্ম। মাত্র ২ বছর বয়সেই তিনি ‘ব্রাইন ফিভার’ নামক এক জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং অন্ধ ও বধির হয়ে যান। ৬ বছর বয়সে তার বাবা-মা তাকে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে নিয়ে যান। বেলের পরামর্শে তারা তাকে বোস্টন শহরে ‘পার্কিন্স ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড’ এ ভর্তি করেন। ৭ বছর বয়সে তিনি তার শিক্ষক অ্যানি সুলিভানের প্রচেষ্টায় ব্রেইলি পদ্ধতির সাহায্যে পড়তে ও লিখতে শিখেন।
মুখের ভাষায় মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করতে উদগ্রীব ছিলেন কেলার। তাই ১৮৯০ সালে বোস্টনের ‘হোরাস মান স্কুল ফর দ্য ডিফ’ স্কুলে ভর্তি হন। দীর্ঘ ২৫ বছর সংগ্রামের পর তিনি কথা বলতে সক্ষম হন। ১৯০৪ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ‘র্যাডক্লিফ কলেজ’ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। একজন অন্ধ-বধির হয়েও স্নাতক পাশ করায় চারদিকে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এর সুবাদে সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন, প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লেভল্যান্ড, উড্রো উইলসনসহ বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণায় এক সময় সাহিত্য রচনা শুরু করেন তিনি। ১৯০৩ সালে তার জীবনের প্রথম ২১ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি আত্মজীবনী ‘দ্যা স্টরি অফ মাই লাইফ’ লিখেন।
এছাড়া দ্য ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন, লাইট ইন মাই ডার্কনেস, দ্য সং অফ দ্য স্টোন ওয়াল, আউট অফ দ্য ডার্ক, থ্রি ডে’স টু সি, হাউ ই উড হেল্প দ্য ওয়ার্ল্ড, রেবেল লাইভস, দ্য ওপেন ডোর, অপ্টিমিজম অ্যান্ড স্ট্রাইক অ্যাগেইনস্ট ওয়ার, দ্য মিরাকল ওয়ার্কার, বাইলাইন অফ হোপসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় বই লিখেছেন তিনি।
তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় মানবকল্যাণে কাজ করে গেছেন। বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও বক্তৃতার মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। অন্ধদের কল্যাণে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কংগ্রেসে জোর দাবি জানিয়েছেন। অন্ধদের কল্যাণে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও তহবিল গঠনে কাজ করেছেন।
অন্ধ ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিনি ১৯১৫ সালে ‘হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল’ নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯২০ সালে তিনি ‘আমেরিকান সিভিল লিভারটিস ইউনিয়ন’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সমর্থনে ১৯০৯-১৯২১ সময়ে তিনি অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছিলেন। সমাজতন্ত্র ও তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি ‘আউট অফ দ্য ডার্ক’ নামে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সমাজতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তাকে অনেক সমালোচনা শুনতেও হয়েছে।
১৯৪৬ সালে তিনি আমেরিকার অন্ধকল্যাণ ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরামর্শক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬-৫৭ সময়ে তিনি বিশ্বের ৩৫টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন এবং অন্ধদের কল্যাণে কাজ করেছেন।
১৯৬৮ সালে কেলার যখন মারা যান তখন বিশ্বজুড়ে তিনি ছিলেন শারীরিক অক্ষমদের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।
টাইমস/এএইচ/জিএস