মাও সেতুং : গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জনক

মাও সেতুং। একজন চীনা কমিউনিস্ট বিপ্লবী। তাকে বলা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জনক। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার দেয়া সামাজিক মতবাদ, সামরিক কৌশল ও রাজনৈতিক চিন্তা সামষ্টিকভাবে ‌‘মাওবাদ’ হিসেবে পরিচিত। ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চীনের হুনান প্রদেশের শাওশান শহরে এক ধনাঢ্য কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাও সেতুং।

শৈশব থেকেই তিনি চীনা জাতীয়বাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন। ১৯১১ সালের ‘শিনহাই বিপ্লব’ ও ১৯১৯ সালের “মে’ ফোর্থ আন্দোলন” এর দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন মাও সেতুং। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে তিনি “মার্কসবাদ-লেনিনবাদ” এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

চীনা জাতিয়তাবাদী দল কুমিনটাং (কেএমটি) ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলাকালে তিনি ‘চীনা কৃষক-শ্রমিক রেড আর্মি’ গঠন করেন। এসময়ই তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিনটাং পার্টির সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি জোট গঠন করে। তবে জাপানের আত্মসমর্পণের পর চীনে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি চীনের জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাত করে। এ সরকার তাইওয়ানে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় এবং ‘রিপাবলিক অব চায়না’ (তাইওয়ান) প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রিত একদলীয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন’ রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন মাও সেতুং। ১৯৫০ সালর কোরিয়ান যুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক বিজয় ও ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে চীনে তার নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় হয়। তার নেতৃত্বেই ১৯৫০ সালে চীন তিব্বতের উপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং তিব্বতকে চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

চীনকে দ্রুত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্প নির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত করতে মাও সেতুং ১৯৫৭ সালে ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ নামে প্রচারণা চালান। কিন্তু তার এ প্রচারণার ফলে চীনের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যাতে ১৯৫৮-৬২ সময়ে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন লোক মারা যায়।

চীনা সমাজ থেকে বিপ্লববিরোধী উপাদান দূর করতে ১৯৬৬ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ডাক দেন মাও সেতুং। এ বিপ্লবের লক্ষ্য চীনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। কিন্তু ১০ বছর ধরে চলা এ বিপ্লবে ব্যাপক সহিংস হয়েছিল, যা চীনের বহু ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক নিদর্শন ধ্বংস করে দেয়।

১৯৭১ সালে পিংপং ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন মাও সেতুং। ফলে তাইওয়ানকে সরিয়ে আবারো জাতিসংঘের সদস্যপদ ফিরে পায় চীন। একজন বিতর্কিত চরিত্র হলেও আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত প্রভাবশালী এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাও সেতুং। মাও এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব চীন থেকে পূঁজিবাদ বিদায় করা। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে চীনকে একটি বিশ্ব শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন মাও সেতুং।

১৯৭৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই মহান বিপ্লবী। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে মাও সেতুং যুগের অবসান ঘটে।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৬০০ মিটার দৌড় : দুই তারকা ক্রিকেটারসহ অনুপস্থিত পাঁচ Apr 20, 2024
img
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ, যশোরে রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি Apr 20, 2024
img
লেবুপানি খাবেন যে কারণে Apr 20, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.৩, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু Apr 20, 2024
img
সর্বোচ্চ বাড়িয়ে কমল স্বর্ণের দাম Apr 20, 2024
img
উপজেলা নির্বাচনকালে আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ : কাদের Apr 20, 2024
img
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন : ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৭ Apr 20, 2024
img
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা Apr 20, 2024
img
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা : জাতিসংঘ Apr 20, 2024
img
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল Apr 20, 2024