মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই সিরিয়ার সঙ্গে ‘দৃঢ় ও প্রকৃত সংলাপ’ বজায় রাখতে হবে। সিরিয়া যেন একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে, এ জন্য এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেওয়া যাবে না, যা দেশটির অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান ট্রাম্প।
এই মন্তব্য এমন সময় এলো, যখন কয়েক দিন আগেই ইসরায়েল সিরিয়ার ভেতরে নতুন হামলা ও অনুপ্রবেশ চালিয়েছে। রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে সেই হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার নবগঠিত সরকার ইসরায়েলের এই আচরণকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে নিন্দা করেছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল বেইত জিন্ন এলাকায় ‘নৃশংস ও পরিকল্পিত গোলাবর্ষণ’ চালিয়েছে। এটি পূর্ণ মাত্রার একটি যুদ্ধাপরাধ।
এদিকে, ট্রাম্প তার পোস্টে সরাসরি ওই ইসরায়েলি হামলার কথা উল্লেখ না করলেও জানিয়েছেন, সিরিয়ার নতুন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। গত বছরের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বিস্তারের ধারাবাহিকতায় এই ধরনের হামলা অব্যাহত রয়েছে।
বরং ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার প্রতি প্রশংসা জানিয়ে বলেন, বহু বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে যে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা দূর করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার উন্নতির অগ্রগতিতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যাতে সিরিয়ার সরকার তাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকে ও একটি সত্যিকারের সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা কঠোর পরিশ্রম করছেন যাতে ভালো কিছু ঘটতে পারে এবং সিরিয়া ও ইসরায়েল দীর্ঘমেয়াদে সমৃদ্ধ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। তবে বিবৃতিতে ট্রাম্প উল্লেখ করেননি যে তার সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আলোচনায় সিরিয়া ইস্যু উঠেছে কি না। অবশ্য তিনি জানান, খুব শিগগির নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আলোচনা অনিশ্চয়তায়
গত মাসে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা আহমেদ আল-শারা জানিয়েছিলেন, তার সরকার ও ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েল যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সিরিয়ার দখলীকৃত ভূখণ্ডে সফর, যা বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েল দখল করে রেখেছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল বেইত জিন্ন শহরে অনুপ্রবেশ চালিয়ে দাবি করে, তারা লেবাননের মুসলিম ব্রাদারহুড শাখা ‘আল-জামাআ আল-ইসলামিয়া’র সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা লেবাননের বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে না।
জানা যায়, বেইত জিন্নতে স্থানীয় জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। এতে দুই শিশুসহ মোট ১৩ জন নিহত হয়।
টিজে/টিকে