চৈত্র মাসে কৃষিতে কৃষকের করণীয়

ফাল্গুন মাস শেষ হয়ে প্রকৃতিতে এখন বিরাজ করছে চৈত্র মাস। চৈত্র বাংলা বছরের শেষ মাস। কিন্তু আমাদের কৃষির কাজকর্মের শেষ বলে কিছু নেই। বরং এ মাসে রবি ফসল ও গ্রীষ্মকালীন ফসলের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম একসঙ্গে করতে হয় বলে কৃষকের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

চলুন জেনে নিই, চৈত্র মাসে কৃষিতে কৃষকের করণীয়

ধান
চৈত্র মাসে ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকা ও রোগের আক্রমণ হতে পারে, এজন্য সতর্ক থাকুন। পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করতে পারেন।

এসব পন্থায় রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতা পোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ১.৫ কেজি/শতাংশ হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭-১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে।

যারা শীতের কারণে দেরিতে চারা রোপণ করেছেন তাদের ধানের চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধান ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া দিয়ে থাকলে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে না। সার দেয়ার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। জমিতে যদি সালফার ও দস্তা সারের অভাব থাকে এবং জমি তৈরির সময় এ সারগুলো না দেয়া হয়, তবে ফসলে পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ পরীক্ষা করে শতাংশপ্রতি ২৫০ গ্রাম সালফার ও ৪০ গ্রাম দস্তা সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ধানের কাইচ থোড় আসা থেকে শুরু করে ধানের দুধ আসা পর্যন্ত ক্ষেতে ৩-৪ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।

গম
দেরিতে বপন করা গম পেকে গেলে কেটে মাড়াই ও ঝাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। শুকনো বীজ ছায়ায় ঠান্ডা করে প্লাস্টিকের ড্রাম, বিস্কুটের টিন, মাটির কলসি ইত্যাদিতে সঠিকভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

ভুট্টা
ক্ষেতের পাকা ভুট্টা সংগ্রহ করে শুকিয়ে নিন। এগুলো জ্বালানি ও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে বীজ বপনের ব্যবস্থা নিতে পারেন এ সময়।

পাট
চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত পাটের বীজ বপন করা যায়। পাটের ভালো জাতগুলো হলো ও-৯৮৯৭, ওএম-১, সিসি-৪৫, বিজেসি-৭৩৭০, সিভিএল-১, এইচসি-৯৫, এইচ এস-২৪। পাট চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়িভাবে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। সারিতে বুনলে প্রতি শতাংশে ১৭ থেকে ২০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বুনলে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। পাটের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৭-১০ সেন্টিমিটার রাখা ভালো।

গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি
গ্রীষ্মকালে শাকসবজি চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করতে হবে। এজন্য চৈত্র মাসেই জমি তৈরি, মাদা তৈরি, সার প্রয়োগের কাজ করতে হবে। গ্রীষ্মকালে যেসব সবজি চাষ করা যায় সেগুলো হলো গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙা, শসা, ওলকচু, পটল, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ইত্যাদি।

অন্যান্য ফসল
এই সময়ে চিনা কাউন, কাউন, মিষ্টি আলু, আলু, পেঁয়াজ, রসুন পরিপক্ব হলে মাঠ থেকে তোলার ব্যবস্থা নিন। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাঠের পাকা ফসল যথাসময়ে কেটে মাড়াই ঝাড়াই করে ঘরে তুলুন। এছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে মাঠের এবং ঘরের ফসল যাতে পচে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

গাছপালা
এ সময় মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। এ অবস্থায় গাছের গোঁড়ায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিন। কলা বাগানের পার্শ্বচারা, মরা পাতা কেটে দিন। তাছাড়া নার্সারিতে চারা উৎপাদনের জন্য বনজ গাছের বীজ বপন করুন। বাঁশ ঝাড়ের গোঁড়ায় মাটি ও জৈব সার প্রয়োগ করুন ।

পশুসম্পদ
চৈত্র মাসে বেশ গরম পড়ে। তাই গবাদিপশুর এ সময় বিশ্রামের প্রয়োজন। গবাদিপশুকে ছায়ায় রাখুন এবং বেশি বেশি পানি খাওয়ান। সেই সঙ্গে নিয়মিত গোসল করান। আর গবাদিপশুর গলাফুলা, তড়কা, বাদলা ও মুরগির কলেরারোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে উপজেলা পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন ।

মৎস্য
মাছের আঁতুড় পুকুর তৈরির কাজ এ সময়ে শেষ করতে হবে। পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলে নিচ থেকে পচা কাদা তুলে ফেলতে হবে এবং শতাংশপ্রতি ১ কেজি চুন ও ১০ কেজি গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। পানিভর্তি পুকুরে প্রতি শতাংশে ছয় ফুট পানির জন্য এক কেজি চুনগুলে ঠাণ্ডা করে দিতে হবে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: