স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে যানবাহন বেড়েছে। ফলে যানজটও বেড়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ঢাকা ইউলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অসহনীয় যানজট : সমাধান কী?’ শীর্ষক সংলাপে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। সংলাপে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ছাড়াও নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, 'বর্তমান সরকার টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এ কারণে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। এই ১৩ বছরে অনেকগুলো উন্নতির কারণেই ট্রাফিক সিস্টেমটা ট্রাফিক প্রবলেমটা আমাদের কাছে একটা হেডেক হয়ে গেছে। ট্রাফিক সমস্যা নাই পৃখিবীতে এমন কোনো জায়গা নাই। আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি তা মাথায় নিয়ে সে বিবেচনায় সমাধানের চিন্তা করতে হবে। '
মন্ত্রী আরো বলেন, 'রাস্তা না রেখে শুধু বড় বড় বিল্ডিং করলে এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়লে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহী করতে হবে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গাড়ির গতি মানুষের হাঁটার চেয়েও কম হবে। ট্র্যাফিক জ্যাম নিরসন করা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। সমন্বিতভাবে কাজ করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ করতে হবে।
ট্রাফিক আইন মানার বিষয়ে মানুষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। ঢাকা শহরে কত মানুষ বসবাস করবে তা ঠিক করা জরুরি। কারণ সবাই ঢাকায় রাখা সম্ভব না। ঢাকা ডিটেল এরিয়া প্লান-ড্যাপ সে লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হচ্ছে। ঢাকাকে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। মূল ঢাকায় না থেকে যাতে করে মানুষজনকে সম্প্রসারিত এলাকা স্থানান্তর করা যায় সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। '
মন্ত্রী আরো বলেন, 'ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লোক আসছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের মূল শহরে বসবাসের কষ্ট বাড়িয়েছে। এতে মানুষজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে এবং সকালবেলা কর্মক্ষেত্রে চলে আসে। ঢাকায় থাকার লিভিং কস্ট এবং গ্রামে থাকার লিভিং কষ্ট যদি প্রায় সমান হয় তাহলে ইনকাম এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় মানুষ ঢাকায় আসবে এটাই স্বাভাবিক। জোনভিত্তিক পানি, গ্যাস, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করার কথা আমি প্রায় বলে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। '
এর আগে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে একটি বিলের ওপর একটি আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যদি আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকে তাহলে উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে। সোমবার সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সাড়ে চার হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশ হবে। তখন এর বহুমুখী প্রভাব পড়বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে গাড়িঘোড়া বাড়বে। এটা হলে গ্রামের মানুষও অনেকটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পড়বে। উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে, ফলে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। '
ঢাকায় যানজট সমস্যার সমাধানে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। চাইলে এখনো যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট পরিস্থিতির উন্নতি কিভাবে হয়েছে সে তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, "যানজট নিরসনে কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ শহরে যানজটমুক্ত ঘোষণা দেওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে। সেখানে এখন যানজট হয় না। এভাবে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা ‘অমুক করতে হবে, তমুক করতে হবে, এটা করা উচিত এটা করা উচিত’ বলেই চলেছি। কিন্তু করবেটা কে?"