স্বপ্নের পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্তি আজ

পদ্মা সেতু একটি আকাঙ্খা, একটি স্বপ্নের নাম। বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সাহস। পদ্মা সেতু দেশের গর্ব। পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মুখের হাসি।

সেতুর কল্যাণে বদলে যাচ্ছে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর জেলার প্রতিদিনের চিত্র। স্বচ্চলতার পাশাপাশি, শক্ত করেছে এসব এলাকার মানুষের পায়ের তলার মাটি। প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে শিল্প, কল কারাখানা, নতুন নতুন অভিজাত বাণিজ্যিক ভবন, শপিংমল।

পদ্মা সেতু থেকে দেশের অর্জন চমকে দেওয়ার মতো। দেখতে দেখতে এক বছর পার করল পদ্মাসেতু। স্বপ্ন এখন বাস্তব। আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ, সবচেয়ে বেশী উপকারভোগী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।

এক বছর আগেও রাজধানী ঢাকায় আসতে ঘন্টার পর ঘন্টা নদীর ঘাটে অপেক্ষা করতে হতো লঞ্চ কিংবা ফেরি জন্য। দুর্ভোগের যেন শেষ ছিলনা। ভোগান্তি আর সময়ক্ষেপণ করে একরাশ ক্লান্তির নিয়ে ফিরতে হতো এ পথের যাত্রীদের। অপচয় হতো সময়ের।

একটা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল।কিন্তু এখন সব কিছুর অবসান হয়েছে। স্বস্তি ফিরেছে যাত্রায়। সময় চলে এসেছে হাতের মুঠোয়।

২০২২ এর ২৫শে জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর, ২৬ শে জুন জনসাধারণ জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে সাবলীল হয়েছে গ্রামের মানুষের সঙ্গে শহুরে মানুষের যোগাযোগ। খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছে।

আগের মতো আর ফেরিঘাটে অসহনীয় ভোগান্তি নেই। কাজ শেষ হলে ফেরি ধরার তাড়াও নেই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু।

৬. ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। তখন থেকেই মানুষের মনে একগুচ্ছ স্বপ্ন জড়ো হতে থাকে। যার বাস্তবায়ন হচ্ছে এখন।

আগের থেকে যোগাযোগ সহজ আর দ্রুততর হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় বেড়েছে। আগের দরিদ্র নোংরা শহর চিনতেই পারবেন না। যেন ঝাঁ চকচকে শহর। গত এক বছরে ম্যাজিকের মতো বেড়েছে জায়গার দাম। উন্নত হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান।

ঐতিহাসিক সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। দুই পারের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিকাশ ঘটেছে। পদ্মার এপার ও ওপারের কৃষি ও শিল্পপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত হচ্ছে। সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব।

শুধু তাই নয়, এ সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও যুক্ত করেছে বাংলাদেশকে। সেতু নিয়ে দেশের স্বপ্ন আকাশচুম্বী। পদ্মা সেতু একদিন ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু পেরিয়ে ভারত পাকিস্তান ঘুরে ইউরোপ যাবে ট্রেন। এই স্বপ্ন হয়তো সত্যি হতে আর বেশি দেরি নেই।

এদিকে উদ্বোধনের পর থেকে গত এক বছরে পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৭৯১ কোটি টাকা। এই সময়ে সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে মোট ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৫টি যানবাহন। শনিবার (২৪ জুন) পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, গত এক বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। আর প্রতিদিন গড় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৭ টাকা।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, সেতু উদ্বোধনের (২৫ জুন ২০২২) পর থেকে গত ২২ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে সেতুতে মোট টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৭৯১ কোটি টাকা। তিনি জানান, গত বছর জুন মাসে মাত্র ৫ দিনেই পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে ১০ কোটি ১৪ লাখ ১ হাজার ৮৫০ টাকা। এই সময়ে সেতু পারাপার হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ১০৪টি যানবাহন।

এ ছাড়া সর্বশেষ ৩ মাসে প্রতিদিন গড় টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬৬ টাকা। সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপারের অনুমতি দেওয়ায় টোল আদায়ের হার বেড়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৬ জুন থেকে সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়।



Share this news on:

সর্বশেষ

img
সোমবার ফেনীতে এনসিপির পদযাত্রা Jul 20, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 20, 2025
জামায়াতের মঞ্চে ঝড় তুললেন সাবেক বিএনপি নেতা Jul 20, 2025
৬০০ কোটি দামের অ্যাপাচি হাতে পাচ্ছে মোদি, নজর সরাসরি পাকিস্তান সীমান্তে Jul 20, 2025
জামায়াতের সমাবেশে যা বললেন নূরুল হক নূর Jul 20, 2025
জনসমুদ্র জামায়াতের, পড়ে গেলেন আমির, বললেন, অভ্যুত্থানের মতো আরেকটা লড়াই হবে Jul 20, 2025
img
চ্যাটজিপিটির সহায়তায় ৬ মাসে ২৭ কেজি ওজন কমালেন এক ব্যক্তি Jul 20, 2025
img
‘কান্তারা’র পর ঐতিহাসিক চরিত্রে আবারো রিশভ শেট্টির জয়জয়কার Jul 20, 2025
img
খুলনায় মদপানে প্রাণ গেল ৫ জনের, বিক্রেতা আটক Jul 20, 2025
img
জামায়াত আমিরের খোঁজ নিয়েছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান Jul 20, 2025
img
৬টি ত্রুটি এনসিপির নিবন্ধন আবেদনে, সময় দিল নির্বাচন কমিশন Jul 20, 2025
img
শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় রাস্তায় নামতে দ্বিধা করব না: শ্রম উপদেষ্টা Jul 20, 2025
img
বাসায় ফিরেছেন জামায়াত আমির, সমাবেশ বিঘ্ন হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ Jul 20, 2025
img
পাটওয়ারী ও এনসিপিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি কক্সবাজার বিএনপির Jul 20, 2025
img
সোনার জার্সি পরে নেমেও হার মানল গেইল-পোলার্ডদের দল Jul 20, 2025
img
প্রথম থেকেই এটি ফ্যাসিস্ট সং‌বিধান: না‌হিদ ইসলাম Jul 20, 2025
img
স্বাধীনতা থেকে একটি দল দেশের সাথে মুনাফেকি করে আসছে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় Jul 20, 2025
img
কক্সবাজারে এনসিপির মঞ্চ ভাঙচুরে ইসলামী আন্দোলনের তীব্র নিন্দা Jul 20, 2025
img
এর পরও আমাকে ‌‘র’ এর এজেন্ট বললে ধরে নিতে হবে আমার তকদিরে আছে : সালাহউদ্দিন আহমদ Jul 20, 2025
img
কক্সবাজারে এনসিপি নেতার বক্তব্য নিয়ে জেলা বিএনপির বিবৃতি Jul 20, 2025