বৃষ্টির বাগড়ায় আগেভাগেই প্রথম দিনের সমাপ্তি, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো উইন্ডিজও

মাত্রই মোমেন্টামটা পেয়েছিলেন টাইগার শিবিরের বোলাররা। তিন ওভারের ব্যবধানে দুই সেঞ্চুরি প্রত্যাশী ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে চেপে ধরেছিলেন স্বাগতিকদের। এদিকে আলোটাও কমে আসছিল। এ সুযোগে আরও দুটো উইকেট ফেলতে পারলে হয়তো নিজেদের কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড় করাতে পারতেন তাইজুল-মিরাজরা। কিন্তু, হঠাৎ বেরসিক বৃষ্টির বাগড়া। হালকা ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আর আলোক স্বল্পতা; পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩৬ বল বাকি থাকতেই প্রথম দিনের খেলার সমাপ্তি টানলেন মাঠের দুই আম্পায়ার। আর তাতেই হাতে ৫ উইকেটের স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

আক্ষেপ না করে স্বস্তি অবশ্য বোধ করতে পারে বাংলাদেশ দলও। মিকাইল লুইস আর অ্যালিক অ্যাথানেজ যেভাবে এগোচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দিকে, তাতে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। এই দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে রীতিমতো ঘামই ঝরেছে টাইগার বোলারদের।

অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে দিনের শুরুটা অবশ্য ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। টস হেরে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বেশ চাপেই রেখেছিলেন হাসান-শরিফুল-তাসকিনরা। এই পেসত্রয়ীর নিয়ন্ত্রিত লাইন-ল্যাংথে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না ক্যারিবীয়দের উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যান ব্র্যাথওয়েট ও মিকাইল লুইস। ১ দশমিক ৮৫ গড়ে প্রথম ১৩ ওভারে তুলতে সক্ষম হন মাত্র ২৪ রান। এরপরই তাসকিনের জোড়া আঘাত। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে প্যাভিলিয়নে ফেরান উইন্ডিজ ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে। এক ওভার বাদে আবার বোলিংয়ে ফিরে আউট করে দেন ওয়ান ডাউনে নামা ক্যাসি কার্টিকে। ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিনের মাপা ল্যাংথের বলটাকে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে, যেটা লুফে নেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা তাইজুল। ৮ বল খেলে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। ফলে ২৫ রানে স্থির থেকেই দুই উইকেটের পতন ঘটে স্বাগতিকদের। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে প্রবেশ করেন কাভেম হজ। এরপর আর কোনো উইকেট না হারিয়েই প্রথম সেশন শেষ করে উইন্ডিজ।

প্রথম সেশনে খেলা হয়েছে ২৩ ওভার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর তখন ৫০/২।

দ্বিতীয় সেশনে সাবধানী ব্যাটিংয়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন লুইস-হজ। কিন্তু সম্ভাবনা জাগানো এ জুটি হাফ সেঞ্চুরি পেরোতেই আবারও ছন্দপতন। ৩৮তম ওভারের তৃতীয় বলে দুই রান নিতে গিয়ে তাইজুলের থ্রোতে রান আউট হন হজ। ভেঙে যায় ৫৯ রানের একটা সম্ভাবনাময় জুটি। হজ যখন সাজঘরে ফিরছিলেন তার নামের পাশে ৬৩ বলে ২৫ রান। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৮৪/৩।

এরপর ক্রিজে আসেন অ্যালিক অ্যাথানেজ। খেলা শুরু করেন বুঝেশুনে। আর অন্যপ্রান্তে তো লুইস ছিলেনই। এ দুজনের ওপরই ভর করে একটু একটু করে বড় হতে থাকে স্বাগতিকদের ইনিংস। এ সেশনে ক্যারিবীয়দের আর কোনো ধাক্কা দিতে পারেননি টাইগার বোলাররা। ৩১ ওভারে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৬৬ রান তুলে চা বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই সেশন মিলে স্বাগতিকদের স্কোর তখন ৫৪ ওভারে ১১৬/৩।

শেষ সেশনে আরও ৩৬ ওভার খেলা হওয়ার কথা। চা বিরতি থেকে ফিরে ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়াতে থাকেন ক্যারিবীয় দুই ব্যাটসম্যান। সুযোগ বুঝে হাঁকাতে থাকেন বাউন্ডারিও। ৬৪তম ওভারের শেষ বলে হাসান মাহমুদকে চার মেরে নব্বইয়ের ঘরে পা রাখেন লুইস। অ্যাথানেজও হাফ সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই। দুই বল বাদেই মিরাজের হাত ফসকে তাইজুলের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যান লুইস। জীবন পেয়েই অতি সাবধানী আচরণ শুরু করেন এই ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির হাতছানিতেই কি না নার্ভাস নাইনটিজের চাপ জেঁকে বসে তার কাঁধে; ব্যাট থেকে রান আসা যেন প্রায় বন্ধ। কিন্তু সাবলীল ভঙ্গিমায় অপরপ্রান্তের অ্যাথানেজ। পরবর্তী ১০ ওভারে লুইস কোনরকমে ৭ রান তুলতে তুলতে অ্যাথানেজের রান ৮৯।

মনে হচ্ছিল, দুই ব্যাটসম্যানই হয়তো পূরণ করে ফেলবেন তাদের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বপ্ন। আর এরপরই হয়তো পুরোদমে বেরিয়ে আসবেন খোলস ছেড়ে। কিন্তু তখনই দৃশ্যপটে টাইগার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আলগা এক শটে ক্যাচ তুলে দেন লুইস। আর সেটা লুফে নিয়ে তাকে মাত্র তিন রানের আক্ষেপে পুড়তে বাধ্য করেন শাহাদাত হোসেন। লুইস যেতেই তার ভূত পেয়ে বসে অ্যাথানেজকেও। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে গ্রিভসের প্রবেশের পর আরও ১০ বল খেলেন, কিন্তু রান করেন মোটে ১টি। ৭৮তম ওভারের চতুর্থ বলে তাকে নিজের শিকার বানান তাইজুল; উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ৯০ রান নিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন অ্যাথানেজও।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আগমন ঘটে জশুয়া দা সিলভার। কিন্তু এরপর আর কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি স্বাগতিকদের। শেষ মূহুর্তের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর আলোক স্বল্পতার কারণে ৮৪তম ওভার শেষে যখন প্রথম দিনের ইতি টানছিলেন দুই আম্পায়ার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোর্ডে তখন ২৫০ রান ৫ উইকেটের বিনিময়ে। জশুয়া দা সিলভা ১৪ ও গ্রিভস ১১ রানে ক্রিজে অপরাজিত।

দ্বিতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যত দ্রুত সম্ভব অলআউট করতে চাইবে বাংলাদেশ। বিপরীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চাইবে আরও অন্তত দুইটা সেশন পার করে বাংলাদেশের সামনে যতটা সম্ভব চ্যালেঞ্জিং লিড রাখতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৮৪ ওভারে ৫ উইকেটে ২৫০ (লুইস ৯৭, অ্যাথানেজ ৯০, হজ ২৫, সিলভা ১৪*, গ্রিভস ১১, ব্রাফেট ৪, কার্টি ০; তাসকিন ২/৪৬, মিরাজ ১/৪৭, তাইজুল ১/৬৭, শরীফুল ০/২৭ ও হাসান ০/৫৪)।---প্রথম দিন শেষে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বড় পতনের পর স্বর্ণের দামে বড় লাফ Nov 23, 2024
img
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে চ্যালেঞ্জের সামনে নতুন নির্বাচন কমিশন Nov 23, 2024
img
ফার্মগেটে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট Nov 23, 2024
img
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ সংস্কার কমিশনের Nov 23, 2024
img
গেল ৩ মাসে জ্বালানি খাতে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয়: জ্বালানি উপদেষ্টা Nov 23, 2024
img
বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবে যা যা থাকছে Nov 23, 2024
img
ভয়েস অব আমেরিকার জরিপ এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১ শতাংশ মানুষ Nov 23, 2024
img
পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত, আহত ১০ Nov 23, 2024
img
রোববার ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় Nov 23, 2024
img
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালের পরিচালকসহ নিহত ৬ Nov 23, 2024