প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হারের পর কাঠগড়ায় নাঈম শেখের ২৯ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস। ইনিংসের ৮ ওভারের সময় ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। ম্যাচ শেষে তার ইনিংসটাকেই অনেকে হারের কারণ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নাঈমের ঢাল হলেন স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ। কোচের মতে, ফলাফল পক্ষে না এলেও নাঈমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
জাতীয় দলে ফেরাটা সুখকর হলো না নাঈম শেখের। লম্বা সময় ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো করার পর সুযোগ পেলেন টি-টোয়েন্টি দলে। এ যেন টিম ম্যানেজমেন্টের নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে টেস্ট সিরিজ শেষে দেশে ফিরে কড়া সমালোচনা করেছিলেন এনামুল হক বিজয়। ওয়ানডেতে ভালো করে তিনি যেমন ডাক পেয়েছিলেন টেস্টে, তেমনি নাঈমও ওয়ানডেতে ভালো করে ডাক পেলেন টি-টোয়েন্টিতে।
নাঈম কিন্তু অবশ্য তার নিজস্ব গতিতেই এগিয়ে চলছেন। ২৯ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস, ওয়ানডে ফরম্যাটের হিসেবে বেশ কার্যকরী ক্যামিও ইনিংস বলা যেতে পারে এটিকে। তবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে এমন ইনিংসকে সমর্থকরা 'ক্রাইম' বলেই সম্বোধন করেছে।
গতকাল (১১ জুলাই) পাল্লেকেলেতে শুরুটা ভালো হয়েছিল বাংলাদেশের। পাওয়ার-প্লেতে ৫৪ রান এসেছিল টাইগারদের। পিচের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, ব্যাটিংটা ঠিকঠাক চালিয়ে নিতে পারলে ১৭০-১৮০ রানের অনায়াসে করা যেতে পারে। তবে তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ।
অষ্টম ওভারের শেষ বলে লিটন দাসের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন নাঈম শেখ। তখন দলের রান ২ উইকেটের বিনিময়ে ৬৭। এখান থেকে পরের ১২ ওভার বাংলাদেশ রান করেছে মোটে ৮৭। ১ ছক্কা ও ১ চারে নাঈম ২৯ বলে ৩২, আর মেহেদী হাসান মিরাজ ২৩ বলে ২৯ রান করেন।
শেষদিকে শামীম হোসেন পাটোয়ারীর ৫ বলে ১৪ রানের ক্যামিওতে ১৫৪ রান করে বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ের সময় শ্রীলঙ্কা শুরুটা দারুণ করে। প্রথম ২৫ বলেই ৭০ রান করে লঙ্কানরা। তবে এরপর দারুণ কামব্যাক করে বাংলাদেশ। খেলা নিয়ে যায় শেষ ওভার পর্যন্ত। পিচের এই অবস্থা দেখে সমর্থকদের মনে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে ১৫-২০ রানের, অর্থাৎ ১৭০-১৮০ রানের মধ্যে একটা স্কোরের; শুরু থেকেই যেটা অনায়াসে করে ফেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। আর তখনই দৃশ্যপটে অপরাধীর ফ্রেমে চলে আসেন লম্বা সময় পর দলে ফেরা নাঈম। যদি তার ২৯ বলে ৩২ রানের ইনিংসটা ৪৫ বা ৫০ রানের একটি টি-টোয়েন্টিসুলভ ইনিংস হতো!
সামাজিক মাধ্যমে তাকে দেওয়া অপরাধীর তকমা দেশ থেকে অনেক দূরে পাল্লেকেলেতেও পৌঁছে গেছে। তাই সংবাদ সম্মেলনে এই নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ সাকলাইন মুশতাককে। তবে মুশতাক শিষ্যকে ডিফেন্ড করেছেন। পাকিস্তানি কোচের মতে, অপরাধ খুব বড় জিনিস। নাঈমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন এবং দ্রুত এখান থেকে শিখবেন বলেও আশা তার।
এ প্রসঙ্গে মুশতাক বলেন, 'ক্রিকেট ইজ ক্রিকেট। ক্রাইম এখানে নিয়ে আসবেন না। ক্রাইম অনেক খারাপ শব্দ। তারা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছে।
তারা প্রতি বলে হিট করার চেষ্টা করে গেছে। কোচ হিসেবে এটা দেখেছি আমি। তারাও হতাশ। ৪ ওভারে ৮০ রান ছিল শ্রীলঙ্কার। পরে আমরা দারুণভাবে কামব্যাক করেছি। যদি আমরা ১৭০ রান করতাম, তাহলে কী হত? ফলে আমাদের দ্রুত শিখতে হবে এবং দ্রুত মুভ অন করতে হবে। এখান থেকে এগিয়ে যেতে হবে।’
গতকালকের ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্টের বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে একটা হলো- টি-টোয়েন্টিতে বেশ কার্যকরী শামীমের আগে মিরাজকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো। মাত্র ৫ বল খেলে সেই ধারণার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেছেন শামীম। অনেকে তো এটাও বলছেন যে, শামীম মিরাজের জায়গায় গেলেই ১৫-২০টা রান বেশি হয়েই যেত। সেদিক থেকে ম্যানেজমেন্টকেও হারের জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
তার মতে, 'এটা নির্বাচকরা ভালো জানবে। জাকের (আলী অনিক) ইঞ্জুরড ছিল, সে ৫-৬ নম্বরে অনেক ভালো করছিল। নাঈম এসেছিল দলে। আমি নিশ্চিত নই তার ব্যাপারে। আজকেই প্রথম দেখলাম তাকে। মাঝেমধ্যে টিম কম্বিনেশন দেখতে হবে। দলের জন্য কোন কম্বিনেশন ভালো হচ্ছে।'
পাল্লেকেলের কন্ডিশনের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলার হতে পারতেন বাঁহাতি নাসুম আহমেদ। আর বল হাতে রান ডিফেন্ড করার ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরেই বড় ভরসা মোস্তাফিজুর রহমান। পাল্লেকেলেতে এই দুজন কেন ছিলেন না, ম্যাচের পর এমন প্রশ্নও উঠেছে। তবে এটাকে স্রেফ কম্বিনেশনের খাতিরে নেয়া সিদ্ধান্ত বলছেন পাকিস্তানি কোচ।
মুশতাক বলেন, 'কম্বিনেশন দেখতে হবে। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে রান দরকার আপনার। ৭ নম্বরে ব্যাটিং অপশন রাখতে হয়েছে। মিরাজ ভালো ব্যাট করেছে। আমরা ড্রেসিংরুমে যা দেখি, সেগুলো আপনারা দেখেন না। আবার আপনারা যা দেখেন আমরা তা দেখি না। ফলে সব দেখতে হবে আমাদের, এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এমআর/টিকে