নুহাশপল্লীর জৌলুস মূলত গাছপালা। হুমায়ুন আহমেদ নুহাশপল্লী গড়ে ছিলেন গাছপালা দিয়েই। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং এখানে যারা কর্মকর্তা রয়েছে তারা মনে করি না নুহাশপল্লী তার জৌলুস হারাচ্ছে। এখানে নতুন নতুন নাটক বা সিনেমার শুটিং হয় না সেজন্য নতুন করে কিছু বানানো হচ্ছে না। হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে দেশের সব ভক্তের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। কথা গুলো বলছিলেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালিতে (বাগানবাড়ী) জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ত্রয়োাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সাথে দুই ছেলে নিনিত ও নিসাদ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, হুমায়ুন আহমেদ যা গড়ে গিয়েছিলেন সেটা সেভাবেই রাখা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তিনি নুহাশ পল্লীটা গড়েছিলেন বাংলাদেশে যত রকমের গাছাপালা পাওয়া যায় এবং দেশের বাইরে থেকেও উনি গাছ কিনে এনে লাগাতেন। মূলত, এটা গাছের একটা অভয়ারণ্য অথবা পাখিদের অভয়ারণ্য বলা যেতে পারে। আমরা দুর্লভ কোনো গাছ পেলেই নুহাশপল্লীতে এনে লাগাই।
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, নুহাশপল্লী কোনো শুটিং স্পট না। সবুজ নুহাশপল্লীতে আগে যা ছিল, এখন তার চেয়ে আরও বেশি জৌলুস বেড়েছে। স্মৃতি ধরে রাখা মানে কোনো একটা মূর্তি বানালাম এ রকম কিছু না। কোনো একটা মিনার বা কোনো একটা স্মৃতি সৌধ, এটা নিয়ে স্মৃতি ধরে রাখা হয় সেটা আমি মনে করি না। স্মৃতিটা হৃদয়ে ধরে রাখা আছে, স্মৃতি ধরে রাখা আসলে হৃদয়ের ব্যাপার।
দীর্ঘদিন কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১২ সালের ১৯ জুলাই স্থানীয় সময় ১১টা ২০ মিনিটে নিউইয়র্কের বেলভিউ হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ। এর আগে ১২ দফায় কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল তাকে। অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় দ্রুত অবনতি ঘটে। কৃত্রিমভাবে লাইফ সাপোর্টে রাখার পর আজকের দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদের প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা ছিলো আকাশসম। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তার মৃত্যুতে। বাংলা সাহিত্যে আর কোনো লেখকের মৃত্যু এভাবে শোকাহত করেনি বাংলা সাহিত্যের পাঠককে। কোনো লেখকের জন্য এত শোক মিছিল দেখেনি জাতি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার পর সর্বস্তরের মানুষের যে ঢল নেমেছিল তা ইতিহাস হয়েই থাকবে।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪) ও বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। এ দম্পতির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা হলেন বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ ও নাম নুহাশ আহমেদ। ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ওই বছরই অভিনেত্রী শাওনকে বিয়ে করেন তিনি। এ ঘরে তার দুটি সন্তান, নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।
এসএন