তামাকজাত পণ্যের দাম আরো বাড়াতে মত বিশিষ্টজনদের

আসন্ন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে শুল্ককর বাড়ানোর মাধ্যমে ধূমপায়ী ও তামাকসেবীর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে সিগারেট, বিড়ি, গুল, জর্দার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

একইসাথে সিগারেটসহ সবধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর বিদ্যমান কর কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে লেখা এক চিঠিতে এ প্রস্তাব দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে,  বাজারে চলমান প্রতিটি কম দামের সিগারেটে কমপক্ষে চার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম পাঁচ টাকা ও সর্বোচ্চ প্রতি সিগারেট ১২ টাকা খুচরা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে এক শলাকা বেনসনের দাম ২০ টাকা এবং গোল্ডলিফের দাম ১৬ টাকা হতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বিড়ির ক্ষেত্রে মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টার বিহীন ২৫ শলাকার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং চার টাকা ৮০ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ক্ষেত্রে প্রস্তাবে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির মতোই খুচরা মূল্যের ভিত্তিতে করারোপ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার মূল্য ৩৫ টাকা এবং গুলের দাম ২০ টাকা করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জর্দার ওপর পাঁচ টাকা এবং গুলের ওপর তিন টাকা সুনির্দিষ্ট শুল্প আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এনিয়ে বিশিষ্টজনরা তামাকজাত পণ্যের ওপর আরো কর আরোপের ওপর  গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ।

বাঁ থেকে-অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল ও আবু নাসের খান

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, যেকোনো তামাকজাত পণ্য আরো দাম বাড়ালে এই সব কাজ থেকে মানুষ অনিহা প্রকাশ করতো। আর স্বাস্থ্যই তো সকল সুখের মূল। তাই এই সুখের কথা চিন্তা করে আমাদের এই তামাকজাত পণ্য অব্যবহার্য্য করা দরকার। আমাদের মূল কাজ হলো, স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো।

আর সিগারেটের চেয়ে বিড়ি তো আরো খারাপ। বিড়ির তো ফিলটার নেই। আর গুল ও জর্দাতে তো আরো ক্ষতি হয় মানুষের। তাই পরিবেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের আগেভাগে এই পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। তবে অনেকেই এই পণ্য আর নেবে না মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে কিছুটা একমত হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল মনে করেন এভাবে তো আর সমাধান হবে না। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, বেনসন ও গোল্ডলিফের দাম তো অনেক বাড়ানোই হচ্ছে। এই বাড়ানোটাই যথেষ্ট। যদি আরো বাড়ানো হয় তবে তো আরেক বিদেশি কো্ম্পানি এসে এই বাজারটা দখল করতে চাইবে।

‘আরেকটি বিষয় হলো, তামাকজাত দ্রব্য আরো বাড়ানো হলে মানুষ অন্যভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। আর বাংলাদেশটা হলো, কৃষি নির্ভর দেশ। তাই নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর কথাও চিন্তা করতে হবে। আর তাদেরকে একটু সময় দিতে হবে।’

‘তবে জর্দা ও গুলের ওপরে সরকার আরো করারোপ করলে অনেক ভালো হতো। কারণ এই পণ্যগুলোর কারণে দাঁতে ক্যান্সার হয়, যা ডাক্তাররা বলেছেন,’ যোগ করেন এই অধ্যাপক।

এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের শারিরীক ও মানসিক দুই দিক দিয়ে যা ক্ষতিকর তা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এটি তো নিজের ও অন্যের ক্ষতি করে।

‘তামাককে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও ক্ষতিকর হিসাবে ধরা হয়েছে। তাই এটি খাওয়া ইসলামের বিধান অনুসারে স্বাস্থ্যহানিকর,’ বলেন তিনি।    

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on: