ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার পূর্ব প্রস্তুতি

ডায়াবেটিস একটি দুরারোগ্য রোগ, অর্থাৎ একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণরূপে তার থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। তাই সুস্থ থাকার জন্য সব সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে অন্ধত্ব, কিডনি ফেইলুর, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

ডায়াবেটিস শনাক্ত হবার আগে যদি রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে, অর্থাৎ এত বেশিও না যে তাকে ডায়াবেটিস বলা চলে, এমন অবস্থাকে ডায়াবেটিস পূর্বাবস্থা বা প্রি-ডায়াবেটিস বলে।

শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ লোক যাদের প্রি-ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রি-ডায়াবেটিস থাকলেই ডায়াবেটিস হবে এমন কোনো কথা নেই।

বেশকিছু বিষয়, যেমন- জিন, বয়স বা অতীতের ব্যবহার এগুলো আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, তবে এমন অনেক পদক্ষেপ আছে যা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ডায়াবেটিস-২ তে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে নিতে পারেন।

চলুন এমন কয়েকটি উপায় জেনে নিই-

চিনি ও পরিশোধিত শর্করা কম খেতে হবে
চিনি ও পরিশোধিত শর্করা আমাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। আমাদের দেহ এই খাবারগুলিকে ক্ষুদ্র অণুতে ভেঙে দেয়, যা শর্করা হিসেবে আমাদের রক্তে মিশে যায়। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বা ব্লাড-সুগার বেড়ে যায় এবং দেহে ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিন হলো এমন এক হরমোন, যা রক্তের শর্করা দেহকোষে মিশে যেতে সাহায্য করে।

শরীরে যখন ইনসুলিন তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায়, তখন রক্তের শর্করা রক্তেই থেকে যায়। রক্তে শর্করা থেকে যাওয়ার ফলে তা কমানোর জন্য দেহ আরও বেশি ইনসুলিন নিঃসরণ ঘটাতে থাকে। ফলে রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন দুটোই বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে প্রি-ডায়াবেটিস বলা হয়।

সময়ের সঙ্গে রক্তে শর্করা আর ইনসুলিনের পরিমাণ আরও বেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি ডায়াবেটিস টাইপ-টু তে রূপ নিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি এবং পরিশোধিত শর্করা টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যেসব খাবার রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে না সেসব খাবার বেশি খাওয়ার মধ্য দিয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

প্রতিদিন শরীরচর্চা করুন
নিয়মিত শরীরচর্চা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। কারণ শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে আমাদের দেহকোষ ইনসুলিনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়। ফলে যখন আপনি শরীরচর্চা করবেন তখন তুলনামূলকভাবে কম ইনসুলিনেই আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা সহনীয় থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের তথ্য অনুযায়ী প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত লোকেরা নিয়মিত শরীরচর্চা করলে, কতটা করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে তাদের দেহে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ৫৮% থেকে ৮৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

চিনিযুক্ত পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন
চিনিযুক্ত পানীয় বাদ দিয়ে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করার চেষ্টা করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত পরিমাণ চিনিযুক্ত পানীয় পান করে থাকেন তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন
যাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস রয়েছে তারা সবাই অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী এমনটা হয়ত নয়, তবে অনেকেরই তা রয়েছে। সুতরাং আপনার ওজন যদি বেশি হয় এখনি সাবধান হয়ে যান।

কারণ, আপনার দেহের অতিরিক্ত চর্বির ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে। এটি আপনাকে প্রি-ডায়াবেটিস পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে। প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এক হাজার লোকের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক কিলোগ্রাম ওজন কমালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৬ থেকে ৯৬ শতাংশ কমে।

ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপানের ফলে হৃদরোগ থেকে শুরু করে ফুসফুস, স্তন, প্রোস্টেট প্রভৃতি অংশে ক্যান্সার হওয়া থেকে শুরু করে নানা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়। আবার ডায়াবেটিসের সঙ্গে ধূমপানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষত চেইন স্মোকাররা সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

আমেরিকান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের তথ্যানুযায়ী, যারা নিয়মিত মাঝারি মাত্রার ধূমপান করেন তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৪৪% বৃদ্ধি পায়। এছাড়া যারা ২০টির বেশি সিগারেট ব্যবহার করেন, তাদের সম্ভাবনা ৬১% বেড়ে যায়।

সারাদিন বসে থাকা পরিহার করুন
যদি আপনি ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে চান, তাহলে আপনাকে বসে থাকা পরিহার করতে হবে। যদি আপনি সারাদিনে খুব কম বা একেবারেই শারীরিক পরিশ্রম না করেন এবং সারাদিন বসে থাকেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি খুব বেড়ে যাবে। প্রতি ঘণ্টায় একবার উঠে দাঁড়ান এবং কিছুক্ষণ হাহাহাটি করুন। মনে রাখবেন, বসে থাকার অভ্যাস ডায়াবেটিসকে আহ্বান করে।

চা-কপি পান করুন
আপনি প্রাথমিকভাবে যাই পান করে থাকুন না কেন, চা-কফি পানের অভ্যাস আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কফি পান করেন তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৮% থেকে ৫৮% কমে যায়।

চা ও কফিতে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক। আবার গ্রিন টিতে এপিগ্যালোকাট্যাচিন-গ্যালাটে নামক এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগের উপস্থিতি থাকে, যা লিভার থেকে রক্তের শর্করা কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: