আয়রনের ঘাটতি দূর করতে করণীয়

আপনার কি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ে যাচ্ছে? হার্টে সমস্যা? শরীরের শক্তি কমে যাচ্ছে? ভীষণ ক্লান্তি লাগছে? তবে নিশ্চিত জেনে রাখুন যে, আপনার আয়রনের ঘাটতি রয়েছে। মানবদেহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হলো ক্যালসিয়াম। এরপরেই আয়রনের অবস্থান। যদিও আমাদের দেহের জন্য খুব অল্প পরিমাণ আয়রন প্রয়োজন, কিন্তু এটা অপরিহার্য। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস থেকে খুব সহজেই আমরা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারি।

আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতা কী?
মানবদেহের মারাত্মক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলো রক্তস্বল্পতা বা অ্যানেমিয়া। রক্তস্বল্পতা বলতে বুঝায় রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা (রেড ব্লাড সেল) কমে যাওয়া অথবা লোহিত রক্ত কণিকা দ্বারা পরিবাহিত আয়রনের পরিমাণ কমে যাওয়া। আবার যেহেতু লোহিত রক্ত কণিকায় থাকা আয়রন দেহের বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে সেহেতু আয়রনের আরেকটি সংজ্ঞা হতে পারে- কোষে অক্সিজেনের অভাব।

আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতার লক্ষণ ও প্রভাব
১. আয়রনের ঘাটতি হলে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে সবসময় শরীর দুর্বল লাগে।
২. অক্সিজেনের অভাবে বায়ুমন্ডলীয় চাপ কমে যায়। ফলে হার্ট দ্রুতগতিতে রক্ত পাম্প করতে থাকে। এতে হার্টের ক্ষতি হয় এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
৩. চোখের নীচে কালো দাগ পড়তে পারে।
৪. চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)।
৫. হতাশা, ক্লান্তি, অমনোযোগিতা, শিখন ও স্মৃতিশক্তি সমস্যা, মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, সন্ধিতে ব্যথা, গোড়ালী ফুলে যাওয়া, অ্যাজমা, চোখে ব্যাথা, বার্ধক্য, ফেকাশে ত্বক ইত্যাদি নানা স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।

প্রাকৃতিকভাবে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধের উপায়
সঠিক খাদ্যাভ্যাস: সবুজ শাকসবজি, লতাপাতা, বীট, ত্রিপত্রবিশিষ্ট উদ্ভিদ, কলমি, শাকসবজির ডগা, শসা, টমেটো, নারিকেল, কালো জাম, কালোজামের জুস, মাছ ডিম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। তাই প্রতিদিন এসব খাবার বেশি করে খেতে হবে।

আয়রন সাপ্লিমেন্ট: যদি জানতে পারেন যে, আপনি আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন তবে আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া আবশ্যক। তবে এটা নিশ্চিত হতে হবে যেন, আয়রন সাপ্লিমেন্টে ফলিক অ্যাসিড থাকে। কারণ ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি থেকেও রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে
পারে। কিছু কিছু উচ্চ কোয়ালিটির সাপ্লিমেন্টে ভিটামিন বি১২ থাকে। এছাড়া দেখে নেবেন সাপ্লিমেন্টে পর্যাপ্ত ‘এলিমেন্টাল আয়রন’ আছে কিনা। কারণ একমাত্র এলিমেন্টাল আয়রন আমরা শোষণ করতে পারি। এলিমেন্টাল আয়রন না থাকলে দেখে নিবেন ‘আরডিএ’ আছে কিনা।

পরিপাকশক্তিবর্ধক এনজাইম: আয়রন সাপ্লিমেন্ট থেকে পূর্ণ উপকারিতা পেতে একইসঙ্গে পরিপাকশক্তিবর্ধক এনজাইম খেতে পারেন।

সতর্কতা
একই সময়ে ভিটামিন কিংবা ডিমের সঙ্গে আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাবেন না। এটা আপনার শোষণ ক্ষমতা হ্রাস করে দিতে পারে। সেইসঙ্গে চা ও কফি এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো আয়রন সাপ্লিমেন্টের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। বিপরীতে লেবুর জুস কিংবা ভিটামিন-সি খেতে পারেন। কারণ এটা শোষণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: