কচু শাক পুষ্টিগুণে ভরপুর

বর্ষার শেষভাগে যখন অন্যান্য সবজি বেশী পরিমাণে পাওয়া যায় না তখন সবজীর চাহিদা মেটাতে কচু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের দেশে রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, পতিত জমিতে অনাদরে অবহেলায় কচু গাছ জন্মে।

কচুর খাবার উপযোগী জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-মুখী কচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পইদনাল কচু, দুধ কচু, মৌলবী কচু, মানকচু, ওলকচু ইত্যাদি। প্রজাতিভেদে কচুর মূল তরকারি, কাণ্ড সবজি এবং পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়।

কচুর কাণ্ড ও পাতা সবকিছুতেই প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। কচু শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ডিটারেরী ফাইবার, শর্করা, বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে।

সাধারণত আমরা দু’ধরনের কচু শাক ভোজন করে থাকি বা খেয়ে থাকি। এটা হল সবুজ কচু শাক ও কালো কচু শাক।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য সবুজ কচু শাকে রয়েছে- ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি-২ (রাইবোফ্লেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।

প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচু শাকে রয়েছে- ৮.১ গ্রাম শর্করা, ৬.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি১ (থায়ামিন), ০.৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি২ (রাইবোফ্লোবিন), ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ২.০ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৭৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।

চলুন জেনে নিই নিয়মিত কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা-

  • কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচু শাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে।

  • কচু শাকে থাকা ভিটামিন-এ রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
  • কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে, যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচু শাক খেতে পারেন।
  • কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে, এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তাছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো উচিত।
  • আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
  • কচু শাকের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • কচু শাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক সহজলভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারীরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচু শাক খেতে পারেন।

সতর্কতা
কচু শাক বা কচুতে অক্সলেট নামক উপাদান রয়েছে, যা খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। তাই কচু শাক বা কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কচু বা কচু শাক না খাওয়াই ভালো।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: