দুধ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

শিশুদের জন্য খুবই পুষ্টিকর একটি খাদ্য দুধ। দুধকে বলা হয় একটি পরিপূর্ণ খাদ্য। যা অপরিহার্য তিনটি পুষ্টি উপাদান প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের সমন্বয়ে গঠিত একটি সুষম বা আদর্শ খাদ্য। একই সঙ্গে দুধে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-বিসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ রয়েছে।

তারপরও দুধ খাওয়া এবং এর স্বাস্থ্য সুবিধা নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। এগুলো হলো-

ক্যালসিয়ামের সর্বোত্তম উৎস: অনেকের ধারণা ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস দুধ। কিন্তু এ ধারণাটি সঠিক নয়। যদিও দুধে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম রয়েছে। তথাপি প্রকৃতিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যাতে দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে। যেমন- দুই টেবিল চামচ তুকমা বা তুলসী বীজে দুধের চেয়ে ছয়গুণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাছাড়া মনে করা হয় যে, তিন বছর পর থেকে আমাদের দেহে দুধের প্রোটিন (ক্যাসিন) শোষণ করার সামর্থ্য কমতে থাকে। তাই এ সময়ে খাদ্য থেকে গৃহীত প্রোটিন শোষণ করার জন্য আমাদের দেহের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ডি প্রয়োজন।

ফোটানো দুধে পুষ্টিগুণ কম: খামার থেকে সরাসরি সংগৃহীত কাঁচা দুধ ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে খাওয়া হয়। তবে প্যাকেটজাত দুধের বেলায় অনেকে ফুটিয়ে খেতে চান না। তাদের ধারণা, প্যাকেটজাত দুধ ইতোমধ্যে পাস্তুরাইজেশন করে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। তারা মনে করেন, গরম করলে দুধের পুষ্টিগুণ চলে যেতে পারে। কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়। কারণ পাস্তুরাইজেশন করা দুধ বার বার গরম করলেও তার পুষ্টিগুণে কোনো রিবর্তন আসে না।

ঘুম থেকে ওঠে প্রথমেই দুধ খেতে হবে: অনেকের ধারণা যেহেতু দুধ একটি পুষ্টিকর খাদ্য, তাই ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই দুধ খেতে হবে। কিন্তু এই ধারণাটিও ভুল। নিঃসন্দেহে দুধ পুষ্টিকর একটি খাদ্য। তবে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে দুধ খাওয়াটা ভালো নাও হতে পারে। বিশেষ করে কারো যদি পরিপাক ক্ষমতা দুর্বল হয় কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে তাহলে খালি পেটে দুধ খাওয়া ঠিক নয়। তাছাড়া ফ্লু কিংবা কাশির সমস্যা থাকলেও ভোরে দুধ পান করা ঠিক নয়। বরং সকালে হালকা কিছু খাওয়া ভাল, যা সহজেই পরিপাক হয়।

প্রতিদিন দুই গ্লাস দুধ পান করতে হবে: অনেকেই মনে করেন, যেহেতু দুধ একটি পুষ্টিকর খাদ্য তাই প্রতিদিন কমপক্ষে দুই গ্লাস দুধ পান করতে হবে। কিন্তু এই ধারণাটি সঠিক নয়। কারন দুধের ন্যায় পনির বা দই ইত্যাদিতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে। তাই দুধ, পনির কিংবা দই যেকোনো উৎস থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে। পুষ্টির জন্য কেবল দুধের উপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই।

দুধ পান করলে পেট ফাঁপায়: অনেকের ধারণা দুধ পান করলে পেট ফাঁপায়। যাদের ল্যাকটোজ সহনশীলতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এটা সঠিক হতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে বলা যায় দুধ পানে পেট ফাঁপা ফাঁপা লাগে না বা গ্যাসের সমস্যা হয় না। তবে কিছু কিছু খাবারের সঙ্গে দুধ পান করলে গ্যাসের সমস্যা হয়। তাই কখনো কোনো ফলের সঙ্গে দুধ পান করা উচিত নয়।

খাদ্যের বিকল্প হিসেবে দুধ: অনেকেই মনে করেন, যেহেতু দুধ একটি আদর্শ খাদ্য তাই প্রতিবেলা খাদ্যের বিকল্প হিসেবে দুধ পান করা যাবে। কিন্তু নিয়মিত প্রতিবেলা খাদ্যের বিকল্প হিসেবে দুধ পান করা সঠিক নয়। কারণ দুধে থাকা পুষ্ঠিগুণের পাশাপাশি আমাদের পর্যাপ্ত খনিজ, আয়রন ও ভিটামিন প্রয়োজন। বিশেষ করে আঁশ। দুধে পর্যাপ্ত আঁশের অভাব রয়েছে। তাই দুধকে নিয়মিত খাদ্যের বিকল্প হিসেবে মনে করা ঠিক নয়। এতে দেহে ক্যালোরি সংকট দেখা দিতে পারে, যা বিশেষ করে শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত করতে পারে।

দুধ অবশ্যই একটি আদর্শ খাদ্য, যা কোনভাবেই খাদ্য তালিকা থেকে এটা বাদ দেয়া যাবে না। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি: কাদের Apr 25, 2024
img
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা প্রতিরোধে জীবনযাপনে আনুন ৫ পরিবর্তন Apr 25, 2024
img
নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করলেন ন্যান্সি পেলোসি Apr 25, 2024
img
উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে : সিইসি Apr 25, 2024
img
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি Apr 25, 2024
img
যুদ্ধ কখনো কোনো সমাধান দিতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
২৩ এপ্রিলকে চলচ্চিত্রের কালো দিবস ঘোষণা Apr 25, 2024
img
ইতিহাস গড়লেন অভিনেত্রী বাঁধন Apr 25, 2024
img
হিট অ্যালার্ট নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস, মে’র প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির আভাস Apr 25, 2024