হার্ট সুস্থ রাখে সুসম্পর্ক

অনেক আগে থেকেই এটা মনে করা হয় যে, মানুষের স্নেহ, ভালোবাসা, রাগ, অনুরাগ, ইত্যাদির উৎস হচ্ছে হার্ট। এই ধারণাটির শুরু হয়েছিল প্রাচীন মিশরীয় ও গ্রীকদের মধ্যে। উদাহরণস্বরূপ, এরিস্টটল মনে করতেন মানুষের মন রয়েছে হার্টে।

সেই বিবেচনায় মানুষের চিন্তা, চেতনা, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদির উদ্ভব হয় হার্টের বায়ো মেকানিক্যাল পাম্প থেকে। নিউ ইয়র্কের কার্ডিওলজিস্ট ও গবেষক ড. সন্দ্বীপ জুহার এটার নাম দিয়েছেন ‘ম্যাটাফোরিক্যাল হার্ট’।

তার মতে, বিজ্ঞান আসার পূর্বে হার্ট বলতে এই ম্যাটাফোরিক্যাল হার্টকেই বুঝানো হত।

তিনি বলেন, হার্ট হল আত্মার বীজ, যেখান থেকে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, সাহস, ভয়, ইত্যাদির জন্ম। আমাদের ভালবাসা ও সুসম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত এই হার্ট বলতে ম্যাটাফোরিক্যাল হার্টকেই বুঝায়, যা আমাদের বায়োলজিক্যাল হার্টকে প্রভাবিত করে।

তাই যাদের সুস্থ, সুন্দর ও ভালবাসার সুসম্পর্ক রয়েছে তাদের হার্ট অন্যদের থেকে ভাল ও সুস্থ থাকে- বলেছেন ড. সন্দ্বীপ।

বিশেষজ্ঞের মতে, ভালবাসার সম্পর্কটা শুরু হয় মস্তিষ্ক থেকে। আমরা যখন কোনো কিছুর দ্বারা আকর্ষণ অনুভব করি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের গভীরে ডোপামিন পথ ভালো অনুভব করার সংকেত দেয়। এটা আমাদের মনোযোগী হতে এবং অন্যের থেকে প্রশংসা পেতে নির্দেশ দেয়। তাই আমরা যখন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করি, তখন হৃদকম্পন বেড়ে গেলে অবাক হবার কিছু নেই।

একই সঙ্গে মস্তিষ্ক অক্সিটোসিন নামে এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত করতে ভূমিকা রাখে। এটাকে বলা হয় ভালবাসার হরমোন। কারণ এটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে বন্ধন অটুট রাখতে ভূমিকা রাখে। পারস্পরিক আলিঙ্গন কিংবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়।

তাই ভালোবাসার উষ্ণ অনুভূতিগুলো আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা আমাদেরকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে সাহায্য করে। এটা আমাদের মানসিক চাপ, হতাশা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে।

ড. সন্দ্বীপ বলেন, আমরা যখন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকি, তখন আমাদের রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয় এবং রক্তচাপ হ্রাস পায়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একাকী থাকার চেয়ে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের রক্তচাপ অনেক কম ছিল। একইভাবে অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষ ও নারীদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কম বলে এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

ড. সন্দ্বীপ বলেন, সামাজিক সুসম্পর্ক মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে এবং প্রদাহজনিত জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করে, যা হার্টকে সুস্থ রাখে।

গবেষকরা দেখেছেন যে, যারা পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী ও অন্যান্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন তাদের অসুস্থতার হার অনেক কম ছিল।

একই সঙ্গে সুসম্পর্ক আমাদের স্বাস্থ্যকর আচরণ করতেও উদ্বুদ্ধ করে, যা আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে অপর আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, হতাশা, দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা, মন খারাপ ইত্যাদি অনুভূতি রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হার্টকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

তাই হার্ট সুস্থ রাখতে ও দীর্ঘজীবী হতে অবশ্যই জীবনসঙ্গী, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনসহ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: