চকলেট কতটা স্বাস্থ্যকর?

চকলেট আমাদের সবার কাছেই খুব প্রিয় একটি খাবার। কমবেশ আমরা সবাই চকলেটের ভক্ত। বিশেষ করে শিশুদের বেলায় চকলেট সবচেয়ে জনপ্রিয় খাদ্য। তবে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী? এদিকে বিভিন্ন গবেষণায়ও এ নিয়ে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে। তাই আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই জানা উচিত যে চকলেট কতটা স্বাস্থ্যকর?

কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য চকলেট উপকারী। কারণ চকলেট ও এর প্রধান উপাদান নারিকেল উল্লেখযোগ্য হারে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। কারণ নারিকেলে থাকা ফ্ল্যাভানল অ্যান্টিওক্সিডেন্টের ন্যায় প্রতিক্রিয়া করে, যা হৃদরোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোষের ক্ষয় হ্রাস করে।

সাধারণত মিল্ক চকলেটের চেয়ে ডার্ক চকলেটে ফ্ল্যাভানল লক্ষ্যনীয়ভাবে বিদ্যমান। এটা রক্তচাপ নিম্ন রাখতে ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করতে সাহায্য করে।

কিছু গবেষণা চকলেট খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। তবে এই ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও ব্যাপক পরিসরে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তবে চকলেট থেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে অবশ্যই এর উপাদানগুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কারণ বাজারে প্রচলিত চকলেটগুলোর অধিকাংশই এমন সব উপাদান দিয়ে তৈরি, যাতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, চিনি ও ক্যালোরি থাকে। এগুলো ওজন ও মেদ বাড়িয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে জন্য দায়ী।

তবে যেসব চকলেটের উপাদানে চর্বি, চিনি, ক্যালোরি ইত্যাদি কম ও নারিকেল জাতীয় উপাদান বেশি তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

অন্যদিকে কিছু কিছু গবেষণায় ত্বকের ব্রণের সঙ্গে চকলেটের সম্পর্কে খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, চিনি, চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত রুটি, স্ন্যাকস ইত্যাদি উচ্চ পরিমাণে গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ খাবার, যা ব্রণ সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

এসব খাদ্য রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং মেদবহুল গ্রন্থি থেকে সেবাম (মেদ থেকে ক্ষরিত তৈলাক্ত রস) নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে। দেহে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবাম উৎপন্ন হলে তা মৃত ত্বক কোষের সঙ্গে মিলিত হয় এবং ত্বকের ছিদ্রপথে আটকা পড়ে। এগুলো থেকে ধীরে ধীরে ত্বকে ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড ও ব্রণ তৈরি হয়।

তাই চকলেট বা এ জাতীয় জাঙ্কফুড খেলে ত্বকে ব্রণ দেখা দিতে পারে। কারণ এগুলো সাধারণত চিনি সমৃদ্ধ খাবার, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের চকলেট বার ও জেলি বিন খেতে দেয়া হয়। দুটি খাবারেই সমান পরিমাণে গ্লাইসেমিক উপাদান ছিল। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট সময় জেলি বিন খাওয়ার ফলে তাদের ত্বকে কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি। যেখানে একই সময়ে চকলেট খাওয়ার কারণে তাদের ত্বকে ব্রণের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল।

গবেষক ড. গ্র্যাগরি বলেন, গবেষণায় দেখা যায় যে চকোলেট খাওয়ার কারণে অংশগ্রহণকারীদের ত্বকে গড়ে পাঁচটি করে ব্রণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই গবেষণার এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, চকলেট ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে।

এদিকে ২০১৬ সালের অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত চিনি বা দুধ মিশ্রিত না করা সত্ত্বেও চকলেট অংশগ্রহণকারীদের ত্বকে উল্লেখযোগ্য হারে ব্ল্যাকহেড ও ব্রণ তৈরি করেছিল।

তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল- চকলেট খাওয়ার আগে আপনার ত্বক সম্পর্কে জেনে নিবেন যে আপনার ত্বক ব্রণ সংবেদনশীল কিনা? যদি চকলেট খেলে ব্রণ বেড়ে যায় তবে এটা খাওয়া সীমিত করতে হবে।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: