রাতের বেলা ঘুম সাত ঘণ্টার কম হলে মানব দেহের ডিএনএ ক্ষয় হয়ে যেতে পারে, যা আর সুস্থ করা সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে এসব ব্যক্তির ক্যান্সার হবার ঝুঁকি রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
হংকংয়ের কিছু চিকিৎসক যারা সাধারণত রাতের শিফটে দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাদের উপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের ঘুমে ঘাটতি দেখা দিলে ডিএনএ ক্ষয় হবার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এটা ব্যক্তির জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে ,যার ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের মরণব্যাধি রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব থেকে ডিএনএ স্থায়ীভাবে ক্ষয় হয় এবং এর সেরে ওঠার সামর্থ্য হ্রাস পায়। ফলে এ থেকে ভবিষ্যতে জেনেটিক রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে গবেষকরা মনে করছেন।
গবেষকদের দাবি, এটাই প্রথম কোনো গবেষণা যেখানে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের জিনের উপর ঘুমের ঘাটতির প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণাটি ওইসব চিকিৎসকের উপর গুরুত্ব দিয়েছে, যারা রাত্রিকালীন দায়িত্বের কারণে তাদের ঘুমের সময়সূচী পরিবর্তন করেছিলেন।
তবে কেন ঘুম কম হবার কারণে ডিএনএ ক্ষয় হয়ে যায়, সে সম্পর্কে এই গবেষণা প্রতিবেদনে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত প্রতি রাতে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু দেখা যায় যে, প্রাপ্তবয়স্করা অধিকাংশ সময়ই এই পরিমাণ থেকে এক-দুই ঘণ্টা কম ঘুমিয়ে থাকেন।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত এই গবেষণায় ৪৯ জন চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৪ জন চিকিৎসক রাতের শিফটে দায়িত্ব পালন করতেন। যারা রাতের বেলা দায়িত্ব পালন করতেন তারা সাধারণত গড়ে ২-৪ ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পেতেন।
গবেষকরা প্রথম দফায় সব চিকিৎসকের টানা তিন রাত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর পর সকালে তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় দফায় একই চিকিৎসকরা যখন টানা তিন রাত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারেন নি, তখন তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন।
অ্যানাসথেসিয়া জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব চিকিৎসক রাতের শিফটে কাজ করতেন তাদের ডিএনএ অন্যদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি ক্ষয় হয়েছে।
একই সঙ্গে যাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি তাদের ডিএনএ পুনর্গঠনের সক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে ,যার ফলে কোষের মৃত্যু ঘটতে পারে।
গবেষকদের মতে, ডিএনএ’র ক্ষয় বলতে বুঝায় ডিএনএ’র মূল কাঠামোতে এমন এক ধরনের পরিবর্তন, যা ডিএনএ’র প্রতিলিপি তৈরির সময় পুনর্গঠন হয় না। এর ফলে জিনোমিক অস্থায়িত্ব ঘটে এবং কোষের মৃত্যু হতে পারে। যা থেকে পরবর্তীতে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি রয়েছে।
তাই সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গবেষকরা রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
টাইমস/এএইচ/জিএস