ছুটির দিনে লম্বা ঘুমে উপকারিতা নেই

আধুনিক এই যান্ত্রিক যুগে মানুষের ব্যস্ততার কোনো সীমা নেই। মানুষ এতই ব্যস্ত যে, অনেকেই ঠিকমত পুরো একটা সপ্তাহ স্বাভাবিক পরিমাণ ঘুমাতে পারে না। তাইতো তারা সপ্তাহের শেষে যখন ছুটি পায়, খুব ভালো করে লম্বা একটা ঘুম দেয়ার চেষ্টা করে। আমাদের ধারণা এই লম্বা ঘুমে যেন পুরো সপ্তাহের ঘুমের ঘাটতি মিটে যাবে। কিন্তু এ ধারণা কতটা সত্য?

গবেষণা বলছে, আমাদের এ রকম ধারণা সত্য নয়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, পুরো সপ্তাহ স্বাভাবিক সময় না ঘুমিয়ে সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে লম্বা ঘুম দিলেও তাতে ঘুমের ঘাটতি দূর হবে না। বরং এ ধরণের অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস মানুষের স্বাস্থ্যকে আরও খারাপ করে দিতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

সম্প্রতি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তাহান্তের লম্বা ঘুমে ব্যক্তি নিজেকে খুব ধীরভাবে ফিরে পায়। এটা দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা উপকারে আসে না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কলোরাডো বুডার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ অ্যান্ড ক্রোনোবায়োলোজি ল্যাবের পরিচালক ও গবেষণাদলের ঊর্ধ্বতন গবেষক ক্যানেথ রাইট বলেন, সারা সপ্তাহজুড়ে রাত জাগা এবং সপ্তাহের শেষে ঘুমের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করা আদৌ কোনো কার্যকর স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।

এই গবেষণায় ১৮-৩৯ বছর বয়সী ৩৬ জন ব্যক্তিকে গবেষণাগারে দুই সপ্তাহ রাখা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দল পুরো সপ্তাহ ইচ্ছেমত ঘুমাতে পারবে, আরেকটি দল প্রতিদিন পাঁচঘণ্টা করে ঘুমাতে পারবে এবং অন্য দলটি সপ্তাহের প্রথম পাঁচদিন পাঁচঘণ্টার বেশি ঘুমাবে না, তবে সপ্তাহের শেষ দুই দিন ইচ্ছেমত ঘুমাতে পারবে।

গবেষণায় দেখা যায়, যে দুটি দল পাঁচঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারেনি তারা রাতে বেশি খেয়েছিল। তাই তাদের ওজন বেড়ে গিয়েছিল এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা হ্রাস পেয়েছিল। তবে যে দলটি ছুটির দিনে ইচ্ছেমত ঘুমিয়েছিল, সপ্তাহের শেষে তাদের স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও পরের সপ্তাহে রাত জাগার ফলে স্বাস্থ্য আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।

শেষের দলটির মধ্যে যখন আবারও ঘুমের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল তাদের সার্কেডিয়ান বডি ক্লক আবারও ধীর হয়ে গিয়েছিল এবং তারা রাতের খাবার স্বাভাবিক থেকেও বেশি খেয়েছিল।

যাদের ঘুম পাঁচঘণ্টায় সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ১৩ শতাংশ কমেছিল। যেখানে শেষ দলের সদস্যদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে ছিল ৯-২৭ শতাংশ এবং তাদের পেশী ও লিভারের স্বাস্থ্য অন্যদুটি দল থেকে বেশি খারাপ ছিল।

ন্যাশনাল সেন্টার অন স্লিপ ডিসঅর্ডার রিসার্চের পরিচালক মাইকেল তিওয়ারি বলেন, এই গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করছে প্রতিদিন সময়সূচী মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ঘুমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ঘুমানো উচিত।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: