মৃত সন্তান প্রসবের পর দ্রুত গর্ভধারণে ঝুঁকি নেই

মৃত সন্তান জন্ম দেয়া নারীদের জন্য একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সমাজেই একটি প্রচলিত ধারণা হয়ে গেছে যে, মৃত সন্তান প্রসবের পর দ্রুত সময়ের ব্যবধানে পুনরায় গর্ভধারণ করা উচিত নয়। এজন্য অনেক চিকিৎসক অন্তত একবছর অপেক্ষা করতে বলেন, যাতে মায়ের জরায়ু পুনরায় গর্ভধারণে প্রস্তুত হতে পারে।

কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, মৃত সন্তান প্রসবের পরপরই দ্রুত সময়ের ব্যবধানে পুনরায় গর্ভধারণ নিরাপদ এবং এতে কোনো ঝুঁকি নেই।

সম্প্রতি বিখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের মধ্যে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, মৃত সন্তান প্রসবের পর সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় গর্ভধারণে ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় এবং গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু এ ধারণার পেছনে যথেষ্ট প্রমাণক তথ্য নেই বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সন্তান মায়ের গর্ভে অন্তত ২৪ সপ্তাহ থাকার পর মারা গেলে তাকে মৃত সন্তান বলে। তবে ২৪ সপ্তাহ আগে মারা গেলে এটাকে গর্ভস্রাব (মিসকারেজ) বা ভ্রূণ নষ্ট বলে। কিছু কিছু মৃত সন্তান প্রসব ঘটনার ক্ষেত্রে মায়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত কারণ থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই এরকম হয়ে থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৪ হাজার জন্মদান ঘটনার উপর পরিচালিত এই আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায়, মৃত সন্তান প্রসবের পর তাড়াতাড়ি গর্ভধারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যালেক্স হ্যাজেল নারীদেরকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, একজন নারী যখনই জানতে পারেন যে তার সন্তান কেন মারা গেছে, তখন থেকেই তিনি পুনরায় গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

এক্ষেত্রে পুনরায় গর্ভধারণে এক বছর বা তার বেশি সময় অপেক্ষা করার কোনো স্বাস্থ্যগত কারণ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে অনেক সময় কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক চাপ একটা অন্যতম কারণ হতে পারে। যার কারণে মানসিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারেন বলে জানান অধ্যাপক হ্যাজেল।

এই গবেষণায় গত ৩৭ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের ১৪হাজার ৪৫২ জন নারীর জন্মদান তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যারা পূর্বে মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন।

দেখা যায়, ৬৩ শতাংশ নারী মৃত সন্তান প্রসবের পর এক বছরের ভিতরেই আবার গর্ভধারণ করেছিলেন। কিন্তু তারা পুনরায় মৃত সন্তান প্রসব করেন নি। যেমনটা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা একাধিক গর্ভধারণের ক্ষেত্রে দুই বা তিন বছর অপেক্ষা করেছিল।

গবেষক অ্যানাটে র‍্যাগান বলেন, স্বাভাবিকভাবে দুটি গর্ভধারণের মাঝে যথেষ্ট ব্যবধান না থাকলে মায়ের পুষ্টির ঘাটতি থাকতে পারে, যা থেকে গর্ভের শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তবে মৃত সন্তান প্রসব বা মিসকারেজের ক্ষেত্রে এ ধরণের সমস্যা নেই বলে এই গবেষণায় দেখা গেছে।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: