সাধারণত প্রথম ডেটিংয়ে তরুণ-তরুণীর আলোচনায় গুরুত্ব পায় প্রিয় শখ বা মুভির বিষয়। প্রেমের আগে প্রথম সাক্ষাতে মানুষ এমন সব হালকা, সাধারণ বিষয় নিয়েই আলাপ চালিয়ে যায়। তবে নাইজেরিয়ার বিষয়টি একটু ভিন্ন। কেননা সেখানে প্রথম সাক্ষাতেই আলোচনা হয় শরীরের ডিএনএ নিয়ে। যদিও এটি কেবল ‘গ্রেস অ্যানাটমি’তে ছুটি কাটাতে যেতে চাওয়াদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
সিকেল সেল ডিজিজ (এসসিডি) সৃষ্টিকারী জিন বহনকারী কাউকে ডেটিং করার জন্য অনেকে সময়ই নষ্ট করতে চান না। তারা মনে করেন, একে দিয়ে ‘সম্পর্ক চলবে না’। সিকেল সেল ডিজিজ এমন একটি রোগ যা আজীবন বহন করতে হয়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ দামিলোলা ওগুনুপেবি। যিনি সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্য ওগুনে বিবাহ করেছেন। বিবাহের আগে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সঠিক জিনোটাইপের সঙ্গীর সন্ধান।
সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন,‘আমি আমার বর্তমান সঙ্গীর সাথে দেখা হওয়ার আগে সর্বদা এমন ব্যক্তির সন্ধানে ছিলাম যার জিনোটাইপটি আমার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমি সব ডেটিংয়েই প্রথমে যে প্রশ্নটি করতাম তা হলো ‘আপনার জিনোটাইপ কী?’
জিনোটাইপ হলো কোনো বিশেষ বৈশিষ্টের জন্য দায়ী ব্যক্তির ডিএনএতে জিনের সেট। নাইজেরিয়ায় সম্পর্কের ক্ষেত্রে জিনোটাইপগুলো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ তারা বিবাহের আগে নিশ্চিত হতে চায় যে সে সিকেল রোগমুক্ত কি না।
নাইজেরিয়ানদের সিকেল সেল ডিজিজ বা এসসিডি নিয়ে কেন এত সতর্কতা? কি এই এসসিডি? মূলত এসসিডি হলো বিশ্বের সর্বাধিক সাধারণ বংশগত রক্তব্যাধি।ওগুনুপেবির মতো যেসব তরুণী শিশু জন্ম দিতে আগ্রহী তাদের কেউ যদি এমন রোগে আক্রান্ত হন তবে সে শিশু জন্ম না দিয়ে জিনোটাইপ পরীক্ষার ওপর জোর দেন।
সিকেল সেলটি ‘সিকেল সেল ক্রাইসিস’ নামে পরিচিত মারাত্মক বেদনাদায়ক জটিলতা নিয়ে আসে। যেখানে গুরুতর ব্যথার আকষ্মিক এপিসোডগুলো রোগীর শরীরকে আক্রান্ত করে। এর কারণে স্ট্রোক, পক্ষাঘাত এবং পায়ে আলসার ও ঘন ঘন জটিলতা দেখা দেয়।
নাইজেরিয়ার এক সামাজিক উদ্যোক্তা ওসাই ওলাতু, যিনি সিকেলের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তিনি বলেন, সিকেল সেল ডিজিজ শরীরের যে অসুস্থতা নিয়ে আসে তা অত্যন্ত তীব্র। কখনও কখনও এ ব্যথা খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
তার মতে, এই ব্যথা বর্ণনা করা যায় না। এটি উদ্বেগজনক। এটি আপনার হাড়ের ওপর চাপের মতো অনুভূত হয়। যেমন কেউ একসাথে আপনার সমস্ত হাড় ভেঙে দিতে চাইছে।
সিকেল সেল ডিজিজ, যাকে এসএস জিনোটাইপও বলা হয়। এটি রক্ত স্বল্পতার একটি উত্তরাধিকারী রূপ। এটি এমন একটি অবস্থা যাতে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বহন করার মতো পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকা থাকে না- বলেন জয়নব জিমোহ-জনসন।
যদি এ রোগে আক্রান্ত কোনো জুটির বিয়ে হয় তবে তাদের মাধ্যেমে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে সেও সিকেল সেল জিন বহন করবে। এটি কেবল ওই শিশুই নয় পরবর্তী প্রজন্মও এর দ্বারা প্রভাবিত হবে।
জিমোহ-জনসন বলেন, এ কারণেই জিনোনটাইপযুক্ত-এএ নন-ক্যারিয়ারকে বিয়ে করার পরামর্শ দেয়া হয়।
কিছু রোগী স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে সিকেল সেল ডিজিজ নিরাময় করেছেন। যদিও এটি তিনি করতে পেরেছেন ব্যক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। এর চিকিৎসার পেছনে হাজার হাজার ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। তবে বেশিরভাগের জন্যই এর চিকিৎসা নাগালের বাইরে। বিশেষ করে নাইজেরিয়ানদের কাছে এর চিকিৎসা কল্পনার মতো। কেননা তাদের প্রতিদিনের আয় মাত্র ২ ডলারের মধ্যে।
তাই দেশটিতে ডেটিংয়ের ক্ষেত্রে জিনোনটাইপ নিয়ে খোলামেলা আলোচনার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেয়া হয়। সেখানকার সরকার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডররা মনে করে বিবাহের আগে অবশ্যই তরুণ-তরুণীদের এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
টাইমস/এমএস/এসআই