নানা উপায়ে কফি আমাদের স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এমনকি এটি অত্যন্ত বেদনা সৃষ্টিকারী পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। জার্নাল অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে দেখ গেছে, যারা দিনে অন্ততপক্ষে ৬ কাপ করে কফি পান করেন তাদের পিত্তথলিতে পাথর হবার ঝুঁকিটা অনেকাংশেই কমে যায়।
পিত্তথলির পাথর দেখতে অনেকটা নুড়ির মতো, যা অনেক সময় পিত্তনালী বন্ধ করে দেয়। পিত্তথলিতে পাথর জমাট বাঁধার কারণে যখন অসহ্য বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন অনেক সময় অপারেশনের মাধ্যমে পাথরগুলো অপসারণ ছাড়া উপায় থাকে না।
আট বছর ধরে ডেনমার্কের ১ লাখ ৫ হাজার নাগরিককে পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, যারা পৃথিবীর জনপ্রিয়তম এই পানীয়টি প্রতিদিন গড়ে ৬ কাপ করে পান করেন, তাদের পিত্তথলিতে পাথর হবার সম্ভাবনা ২৩% পর্যন্ত কমে যায়।
ডেনমার্কের রিগসহসপিটালেটসের ক্লিনিক্যাল বায়োক্যামিস্ট্রি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ও গবেষণা পত্রটির লেখক ড. এ. ত্যাবজার্গ হ্যানসন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “উচ্চমাত্রার কফি গ্রহণ পিত্তথলির পাথরের ঝুঁকি কমায়।”
কিন্তু যারা প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ বা ছয় কাপের কম কফি পান করেন তাদের জন্য কি কোনো সুখবর নেই?
গবেষণা বলছে- যারা প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ কফি পান করেন, তাদের পিত্তথলিতে পাথর হবার ঝুঁকি কমে যায় গড়ে ৩ শতাংশ। আর প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি পানের মধ্য দিয়ে পিত্তথলির পাথরের ঝুঁকি কমে ১৭% পর্যন্ত।
কফি কীভাবে এই ঝুঁকি কমায়?
হ্যানসন বলছেন, “এটি পিত্তনালীতে জমে থাকা কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যার ফলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। কারণ পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি অনেকাংশেই নির্ভর করে কোলেস্টরেল ও পিত্ত নির্গত এসিডের ভারসাম্যের উপর।”
অন্যদিকে ওয়াশিংটনের ওয়েক ফরেস্ট স্কুল অব মেডিসিনের নেপ্রলোজি বিভাগের প্রফেসর ড. অ্যান্থনি ব্লেয়ার, যিনি এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না এবং কফি পানের সঙ্গে পিত্তথলির পাথরের সম্পর্কের বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তিনি সতর্কতা অবলম্বন করে মন্তব্য করেন, “প্রতি সপ্তাহে কফি পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না অপকারী তা নিয়ে নতুন মন্তব্য আসছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ছয় কাপ কফি কিন্তু যথেষ্ট বেশি এবং এর উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন কিংবা গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, পিত্তথলির পাথরের ঝুঁকি কমাতে কফির উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া এটি একটি প্রাথমিক গবেষণা মাত্র। এটি কার্য-কারণ জাতীয় কোনো চিরন্তন সত্য নয়। সূত্র: ওয়েবএমডিডটকম।
টাইমস/এনজে/জিএস