অগ্নিগর্ভ যুক্তরাষ্ট্র: চার্চে আগুন-ভাংচুর-সংঘর্ষ (ভিডিও)

শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃত্যুর জেরে অগ্নিগর্ভ মার্কিন মুলুক। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে দেশটির নয়টি অঙ্গরাজ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও লাগাতার বিক্ষোভ চলছেই। সেই সঙ্গে পুলিশ ভ্যান, পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনাও বাড়ছে প্রতিদিন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়েও এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের নিবৃত করতে পারেননি। এরই মধ্যে রোববার দিবাগত রাতে হোয়াইট হাউস সংলগ্ন চার্চেও আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

এছাড়া দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বড় শহরগুলোতে থেমে থেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচারপ্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দমাতে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আমেরিকান ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, রোববার রাতে বিক্ষোভের একপর্যায়ে হোয়াইট হাউসের কাছেই অবস্থিত ঐতিহাসিক সেন্ট জনস চার্চে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

ওয়াশিংটন ডিসিরি লাফায়েট স্কয়ার থেকে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হন। সন্ধ্যা নামার পর তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা আমেরিকান পতাকা ও বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়।

এদিকে সিএনএন জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে হোয়াইট হাউসেই অবস্থান করছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পরিবার। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে পাঠিয়ে দেয় তার নিরাপত্তারক্ষীরা।

কিন্তু ট্রাম্পকে আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে রাখার সময় তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কোথায় রাখা হয়েছিল তা নিশ্চিত করতে পারেনি সিএনএন।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সামনে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় হোয়াইট হাউস এলাকা।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে হোয়াইট হাউজের পাশেই ঐতিহাসিক সেন্ট জনস চার্চে কয়েক দফা আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চার্চে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যাতে পৌঁছাতে পারে সেজন্যে পুলিশ টিয়ারগ্যাস মেরে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়।

পরে বিক্ষোভকারীরা আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনের অফিসে হামলা করে। এছাড়া ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করতে করতে হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়ে গেলে আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্ক পুলিশ মাঝপথে তাদের আটকে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময়ই মূলত সংঘর্ষ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি মারা যান। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ সদস্যকে এরই মধ্যে বরখাস্ত করেছে মার্কিন প্রশাসন। এছাড়া জর্জ ফ্লয়েডের পরিবার জড়িত চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের দাবিও জানিয়েছে।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: