কে এই হামলাকারী?

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরও ৪৮ জন আহত হয়েছেন। খবর নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড ও বিবিসির।

নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ এই ঘটনাকে 'জঘন্য হত্যাকাণ্ড' বলে উল্লেখ করে বলেছেন, আল নূর মসজিদে ৪১ জন এবং লিনউড মসজিদে ৭ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ একজন হাসপাতালে মারা গেছেন।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মসজিদে নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী সিজদায় থাকা মুসল্লিদের ওপর গুলি ছুড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

কে এই হামলাকারী?

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, হামলাকারী কট্টর ডানপন্থী। তার নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসলিমদের ওপর হামলা চালান ওই বন্দুকধারী। পরে কাছাকাছি শহরতলি লিনউডের মসজিদে হামলা চালানো হয়। তবে দ্বিতীয় মসজিদে হামলাকারী একই ব্যক্তি কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

বন্দুক নিয়ে হামলা চালানোর কিছু ক্ষণ আগে ইন্টারনেটে সে একটি ৩৭ পাতার ইস্তাহারও প্রকাশ করে। সেই ইস্তাহারের লাইনে লাইনে ছিল মুসলিম বিদ্বেষ ঘৃণা আর শেতাঙ্গ আধিপত্যের চরম মতাদর্শের কথা।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, যে বন্দুকবাজ হামলার লাইভ ভিডিও সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করছিল, তার নাম ব্রেন্টন টারান্ট। এই নামে টুইটারেও একটি অ্যাকাউন্ট আছে তার। ফেসবুকেও সে নিজেই ১৭ মিনিট ধরে এই হামলা চালানোর ভিডিও দেখিয়েছে। যদিও হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই সেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিও। এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকেই সে প্রকাশ করেছিল তার ৩৭ পাতার ইশতেহার। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বন্দুকবাজ যে মতাদর্শ প্রকাশ করেছে, তাতে রয়েছে মোট ৩৭টি পাতা এবং প্রায় ১৬,৫০০ শব্দ। এই ইশতেহারটি সে প্রকাশ করেছে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ নাম দিয়ে। সেখানে এই মতাদর্শের মাধ্যমে ‘নতুন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে পদক্ষেপ’ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীদেরকেই পৃথিবী জুড়ে সমস্ত সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোপের মাটি থেকে বিদেশিদের তাড়াতে এবং ইউরোপের লাখ লাখ শ্বেতাঙ্গ মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে এই ইশতেহারে। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য নিয়ে একটি স্লোগানও দেওয়া হয়েছে।

এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক বেশ কিছু দিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড পুলিশের সন্দেহভাজনদের তালিকায় তিনি ছিলেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে চরমপন্থী মতাদর্শের কথা প্রচার করলেও তাকে কেন নজরদারির তালিকায় রাখা হয়নি, তা নিয়ে সরব হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

প্রত্যক্ষদর্শী কারও কারও মতে, হামলাকারী একাধিক ছিলেন। হামলায় জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ চারজনকে পুলিশ আটক করেছে। একটি গাড়িতে স্থাপন করা বিস্ফোরক উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করেছে পুলিশ।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কট মরিসন বলেন, ক্রাইস্টচার্চে একজন উগ্র মনোভাবের অধিকারী ডানপন্থী উন্মত্ত জঙ্গি হামলা চালিয়েছেন। হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া নাগরিক। তবে তিনি বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্ত করছে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন জানিয়েছেন, হামলাকারী নিরাপত্তা নজরদারির তালিকায় ছিল না।

হামলাকারী পরিচয় ও তার পরিকল্পনা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল নাইন নিউজ।

হামলাকারী সোশ্যাল মিডিয়াতে বলেছেন, ‘আমি গত দুই বছর ধরে একটি হামলার পরিকল্পনা করছি। ক্রাইস্টচার্চে হামলার পরিকল্পনা করছি গত তিন মাস ধরে।’

‘নিউজিল্যান্ডে হামলার বিষয়টি আমার প্রথম টার্গেট ছিল না। আমি স্বল্প সময়ের জন্য নিউজিল্যান্ডে এসেছিলাম। এখানে এসেছিলাম হামলার প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার জন্য।’

তার আদর্শ নরওয়ের উগ্র ডানপন্থী সন্ত্রাসী অ্যান্ডারস বেরিং ব্রেইভিক। ২০১১ সালের ২২ জুলাই দেশটির রাজধানী অসলোতে বোমা হামলা এবং তারপর উটোয়া দ্বীপে গুলি করে মোট ৭৭ জনকে হত্যা করেছিলেন ব্রেইভিক।  

এদিকে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এতে দেখা গেছে, ভিডিও গেমের মতো একজন বন্দুকধারী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করছে। হামলার ভিডিও দেখে ধারণা করা হচ্ছে, বন্দুকধারী হামলার আগে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। হয়তো তার মাথায় ভিডিও ক্যামেরা বসানো ছিল। একটি ওয়েবসাইট জানায়, হামলাকারী হামলাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন।

ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারী স্বয়ংক্রিয় বন্দুক নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মসজিদের দিকে যাচ্ছেন। মসজিদের প্রবেশ কক্ষ থেকেই মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে শুরু করেন। মসজিদের ভেতর ছুটোছুটিরত মুসল্লিদের প্রতি টানা গুলি করতে থাকেন। এরপর মসজিদের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে ঘুরে ঘুরে গুলি করতে থাকেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে যারা মসজিদের মেঝেতে পড়েছিলেন, তাদের দিকে ফিরে ফিরে গুলি করছিলেন তিনি।

ভিডিওটি ভয়াবহ উল্লেখ করে তা অনলাইনে না ছড়াতে লোকজনকে নির্দেশ দিয়েছে নিউজিল্যান্ড পুলিশ।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: