আদালতে হাজিরা দিতে হতে পারে ট্রাম্পকে

যৌন নিগ্রহের ঘটনায় আবার বিপাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা যেতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত।

আদালত জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন তিনি। নিম্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা যেতেই পারে।

মার্কিন মসনদে বসার আগে টেলিভিশনে ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের একটি অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করতেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী সামার জার্ভস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলেছেন। মানহানির মামলা ঠুকেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মানহানির মামলা করা যাবে না বলে দাবি করেন ট্রাম্পের আইনজীবী মার্ক কাসোবিৎজ। মামলা বাতিল করতে আবেদন জানান তিনি।

মার্কিন সংবিধানকে উদ্ধৃত করে বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হলে মামলা করা যেতে পারে। তার আগে নয়। কিন্তু ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তার যুক্তি খারিজ হয়ে যায় নিম্ন আদালতে। যার পর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের আপিল আদালতেও তার যুক্তি খারিজ হয়ে যায়।

বিচারপতি ডায়ান রেনউইক নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির মধ্যে তিনজনই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সায় দেন। বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবশ্যই গুরুদায়িত্ব সামলাচ্ছেন ট্রাম্প। তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হলেও আর পাঁচজনের মতো তিনি একজন মানুষ। তাই তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে নন।’

মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে পূর্ণ কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা শুধুমাত্র প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বলে জানান বিচারপতি রেনউইক।

তার কথায়, ‘প্রশাসনিক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোনো নিম্ন আদালতে মানহানির মামলা করা যেত না। কিন্তু এই মামলা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট বলে তাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।’

এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের কথাও উঠে আসে আদালতে। যৌন কেলেঙ্কারির জেরে ১৯৯৮ সালে হোয়াইট হাউস থেকে সরানো হয়েছিল তাকে। তার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে ১৯৯৭ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টও একই অবস্থান নিয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও নিম্ন আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের যাওয়ার বিপক্ষে মত দেন ওই ডিভিশন বেঞ্চের বাকি দুই বিচারপতিকে।

তারা জানান, ‘এভাবে নিম্ন আদালতে ট্রাম্পকে টেনে আনলে সাংবিধানিক কাজকর্ম এবং আইন-শৃঙ্খলা কায়েম রাখতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে প্রেসিডেন্টকে।’  কিন্তু আদালত সংখ্যাগুরুর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ায় এখন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন ট্রাম্পের আইনজীবী। তবে মার্কিন শীর্ষ আদালত যদি নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে, তাহলে খুব শিগগির মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে দেখা যেতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ যদিও বহুদিনের। তবে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন সেই সংক্রান্ত একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করে। নির্বাচনী প্রচার চলাকালীনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ পায়। তাতে  যেখানে নিজে মুখে নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের কথা মেনে নেন ট্রাম্প। এমনকি তা নিয়ে নিজেকে জাহিরও করতে শোনা যায় তাকে।  বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন  সামার জার্ভসও।

তিনি জানান, অ্যাপ্রেন্টিস চলাকালীন ২০০৭ সালে দু’-দু’বার তাকে জোর করে চুমু খান ডোনাল্ড ট্রাম্প।  হোটেলে নিয়ে গিয়ে তার শ্লীলতাহানি করেন। তবে ট্রাম্প সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। সামার জার্ভসকে মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করেন। তারপরই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন সামার জার্ভস।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: