আইএসের ‘খিলাফত’ নির্মূলের ঘোষণা কুর্দি বাহিনীর

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী শনিবার ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের পাঁচ বছরের ‘খিলাফত’ নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে।

সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে জিহাদিদের সর্বশেষ ঘাঁটি দখলে নেয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হলো। খবর এএফপির।

কুর্দি বাহিনীর মুখপাত্র মোস্তফা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ) তথাকথিত খিলাফতের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। জিহাদি গ্রুপ আইএসআইএসকে শতভাগ পরাস্ত করা হয়েছে।’

তিনি জানান, এসডিএফ বাগুজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটি ছিল জিহাদিদের সর্বশেষ ঘাঁটি।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি-আরব জোটের যোদ্ধারা এই ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপনে শনিবার সকালে বাগুজে তাদের হলুদ পতাকা উত্তোলন করে।

একসময় আইএসের শক্তি যখন তুঙ্গে- তখন তারা সিরিয়া এবং ইরাকের ৮৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করত। আয়তনের দিক থেকে সেটি ছিল ব্রিটেনের সমান।

সেখানকার বাসিন্দা এক কোটি লোকের ওপর তারা জঙ্গি ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তেল বিক্রি, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং ডাকাতি করে তারা শত শত কোটি ডলার আয় করেছিল।

সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা আইএসের পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং কুর্দি-প্রধান এসডিএফ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে হারতে হারতে তারা শেষ অবস্থান নিয়েছিল পূর্ব সিরিয়ার বাগুজে। এখন তাদের সেই ঘাঁটিরও পতন ঘটল।

এসডিএফ আইসএস-এর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই শুরু করে গত মার্চ মাসে। কিন্তু সেই অভিযানের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে যখন জানা যায় যে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন ভবন, তাঁবু আর সুড়ঙ্গগুলোতে বহু বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন। লড়াই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাজার হাজার নারী ও শিশু সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলেও আইএস-কে এখনও বিশ্ব নিরাপত্তার বিরুদ্ধে একটা প্রধান হুমকি বলে মনে করা হয়। আইএসের প্রভাব ঐ এলাকায় এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি।

নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান এবং ফিলিপাইনে এখনও বহু আইএস অনুসারী রয়ে গেছে।

ইরাকে ২০০৩ সালের মার্কিন অভিযানের পরবর্তীকালে 'ইরাকী আল-কায়েদা' থেকে 'ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক'-এর জন্ম হয়। ২০১১ সালে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দেয়। সিরিয়ার রাক্কা হয় তাদের রাজধানী।

তাদের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি গোষ্ঠীটির নতুন নাম দেন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লেভান্ট (সিরিয়া)- সংক্ষেপে আইসিস বা আইসিল।

তারা মসুল এবং তিকরিতসহ অনেক ইরাকি শহর এবং সিরিয়ার বৃহত্তম হোমস তেলক্ষেত্র দখল করে নেয়। এরপর ২০১৪ সালে জিহাদি গ্রুপটি 'খিলাফত' প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়- যার নাম হয় ইসলামিক স্টেট।

আইএস যোদ্ধারা ইরাকের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা এবং ইয়াজিদি নারীদের যৌনদাসীতে পরিণত করে। তারা পশ্চিমা জিম্মিদের শিরশ্ছেদের বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রচার করে। ওই বছর সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী তাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে।

তবে বাগুজে পরাজয়ের পরও মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে আইএস-এর ১৫ থেকে ২০ হাজার সশস্ত্র সদস্য ওই অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এর অনেকগুলোই 'স্লিপার সেল' অর্থাৎ তারা এখন গোপনে অবস্থান করছে এবং আইএস পুনর্গঠিত হওয়া শুরু করলেই তারা আবার ভেসে উঠবে। বাজের পতন যখন অত্যাসন্ন তখনও আইএস তাদের কথিত মুখপাত্র আবু হাসান আল-মুহাজিরের একটি অডিও বার্তা প্রচার করেছিল। তাতে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন খিলাফত শেষ হয়ে যায়নি।

 

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: