মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে আবার আত্মহত্যা করেছেন ভারতের আরেক জন পেঁয়াজচাষি। ন্যায্য দাম না পাওয়ায়, বহু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার জেরেই পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তেলেনিপাড়া গ্রামের বাপি টুডু (৩২) নামে ওই চাষি আত্মঘাতী হন বলে তার পরিবারের দাবি।
শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরেননি বাপি। শনিবার ভোরে বাড়ির কাছেই খেতে তাকে বেঁহুশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পড়শিরা। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। তাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান তিনি।
আনন্দবাজার জানায়, গত ২৭ মার্চ এই ব্লকেরই সিজা-কামালপুর পঞ্চায়েতের গৌরনই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সুমন্ত ঘোষ আগাছা মারার ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হন। তিনিও পেঁয়াজের দাম পাচ্ছিলেন না।
এ বার বাপির আত্মঘাতী হওয়ার কথা জেনে বালাগড়ের বিডিও সমিত সরকার বলেন, ‘বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ওই চাষির বাড়িতে যেতে বলেছি। তার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এ বার এই ব্লকে যে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে তা আগেই মেনেছিলেন বিডিও।
বাপির মা সরস্বতীদেবী বলেন, ‘৫০-৬০ হাজার রুপি মহাজনের থেকে ধার করে ছেলে পেঁয়াজ চাষ করেছিল। ওই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় প্রায় ৩০০ বস্তা পেঁয়াজ পড়ে থেকে নষ্ট হয়। ধার শোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিল ছেলে। সে জন্যই বিষ খেল।’
হুগলিতে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয় বালাগড়েই। এ বার পেঁয়াজের বাম্পার ফলনও হয়েছে। দাম না পাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন বহু চাষি। গত মাসের অসময়ের বৃষ্টি তাদের লাভের আশায় জল ঢালে। অধিকাংশ পেঁয়াজ খেতেই পচে যায়। অনেকে কেজি প্রতি দুই রুপিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেন বলে জানান। সব মিলিয়ে এ বার বালাগড়ে কয়েক কোটি টাকার পেঁয়াজ নষ্ট হয় বলে চাষিদের দাবি।
বাপিরা তিন ভাই, দুই বোন। বাবা গুরুপদ টুডু ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। এ বার মোট ৩ বিঘা ২২ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন বাপি। এর মধ্যে তার নিজের জমি মাত্র ২২ কাঠা। বাকিটা ভাগের। কিন্তু লাভের কড়ি ঘরে তুলতে পারেননি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আলুতে সহায়ক মূল্য ঘোষণা করলেন। রাজ্য সরকার যদি পেঁয়াজও সহায়ক মূল্যে কিনত, তাহলে দুই চাষিকে মরতে হত না।’
কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘সিপিএম ভোটের মুখে এই মৃত্যু নিয়ে অনর্থক রাজনীতি করছে। রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কিনেছে বলেই অনেক চাষির ক্ষতি ঠেকানো গেছে। বালাগড়ের ওই মৃত চাষির পরিবারের পাশে আছি।’
টাইমস/এসআই