বিয়ের অনুষ্ঠানে চেয়ারে বসায় দলিত তরুণকে হত্যা

ভারতে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ওপর উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যার খবর প্রায়শই গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে। এবার খুবই ঠুনকো এক কারণে দলিত সম্প্রদায়ের এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনা ২৬ এপ্রিলের। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পড়ি গাড়ওয়ালের কোট গ্রামে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের মানুষদের সামনে চেয়ারে বসে খাবার খাওয়ার ‘অপরাধে’ দলিত সম্প্রদায়ের এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল নিষ্ঠুর এ ঘটনা ঘটে।

২১ বছর বয়সী জিতেন্দ্র (২১) পেশায়  একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও ছিলেন তিনি।

বিবিসি জানায়, বিয়েতে নিমন্ত্রিত উচ্চবর্ণের একদল লোক তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার নয় দিন পর সে মারা যায়। জিতেন্দ্র মারা গেলেও উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ভয়ে কেউ বিয়ের অনুষ্ঠানে কী হয়েছিল তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। পরে পুলিশ সাংবাদিকদের ঘটনার বর্ণনা দেয়।

‘খাবার পরিবেশন করার পর গণ্ডগোল শুরু হয়। চেয়ারে বসে কে খাচ্ছে এটা নিয়ে তর্কাতর্কির শুরু’- বলেন পুলিশ কর্মকর্তা অশোক কুমার। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দলিত সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, জিতেন্দ্রকে মারধর করে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়। সে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর একদল লোক তার ওপর আবার হামলা করে এবং তাকে বেধড়ক পেটায়।

জিতেন্দ্রর মা গীতা দেবী পরদিন সকালে বাড়ি কাছে মূমুর্ষ অবস্থায় ছেলেকে খুঁজে পান। গীতা দেবী বলেন, ‘হয়ত সারারাত সে ওখানে পড়ে ছিল। তার সমস্ত শরীরে কালশিরা পড়া ছিল। সে আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি।’

কে বা কারা তার ছেলেকে বাড়ির কাছে ফেলে গিয়েছিল জিতেন্দ্রর মা তা জানেন না। নয় দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেন জিতেন্দ্র।

জিতেন্দ্রর বাবা মারা যায় মাত্র পাঁচ বছর আগে। বাবার মৃত্যুর পর স্কুল ছেড়ে পরিবারের হাল ধরতে কাজে নামে কিশোর জিতেন্দ্র।

প্রতিবেশীরা জানায়, স্বভাবে লাজুক জিতেন্দ্র কথা খুব কম বলত। তারা সরকারের কাছে জিতেন্দ্র হত্যার বিচার চেয়েছে।

জিতেন্দ্রর গ্রামে অর্ধশত পরিবার বাস করে। তাদের মধ্যে মাত্র ১২/১৩ ঘর দলিত। একে নিম্নবর্ণ, তার ওপর সংখ্যালঘু হওয়ায় তারা সবসময় চাপে থাকে।

জিতেন্দ্র হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে। যদিও তাদের সবাই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: