মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সোমবার রাজধানী কায়রোর আদালতে মারা যান। কিন্তু এ মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না বিশ্ববাসী। দেশটির স্বৈরশাসক সরকার মুরসির মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, মুরসিকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে, যা অনেকেই ‘গুপ্তহত্যা’র সঙ্গে তুলনা করছেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সারাবিশ্বে হইচই পড়ে যায়।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে একটা বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিশ্ববাসী মিসরের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
মুরসি গণতান্ত্রিক উপায়ে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী এ বাস্তবতা মেনে নেয়নি। মুরসির মৃত্যুতে তিনি মিসরের ‘অত্যাচারী শাসকদের’ দায়ী করেছেন এবং মুরসিকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এমন মৃত্যুর জন্য ‘স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
খ্যাতনামা অধিকার আইনজীবী খালিদ আলি
মুরসিকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চিকিৎসায় অবহেলা ও ২৪ ঘণ্টাই নির্জন কারাগারে ফেলে রাখাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মুরসির বিশ্বাসের সঙ্গে আপনার মিলুক আর না মিলুক, আটকের পর থেকে কারাগারে তাকে যে অবস্থায় রাখা হয় তাতেই শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অবশ্যই শাস্তিযোগ্য।
আরব নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস
মুরসি সিসির ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের একমাত্র শিকার নন। কিন্তু এখানেই যেন ক্ষান্ত হন সিসি।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ
সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসির হঠাৎ মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আমি তার পরিবার ও ভ্রাতৃপ্রতীম মিসরীয় জনগণের সঙ্গে শোক প্রকাশ করছি।
মিসরের রাজনীতিক আয়মান নুর
ছয় বছর ধরে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়ন সহ্য করে অবশেষে শহীদ হয়েছেন মুরসি। তাকে আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে ও ধীরে ধীরে হত্যা করা হয়েছে। এর জন্য সিসি ও তার স্বৈরশাসনই দায়ী।
ব্রাদারহুডের সিনিয়র নেতা এএমআর দারাজ
মোহাম্মদ মুরসিকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। সিসি সেই খুনি। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বাধীন বিচার করতে হবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মুহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে মিসরীয় জনগণ, তার পরিবার ও প্রিয়জনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ
পর্যাপ্ত চিকিৎসসেবার অভাব, আইনজীবীর অধিকার ও পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার অধিকার খর্ব করাসহ মুরসির বন্দিত্ব নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ ছিল। তাকে বরাবরই নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এর তদন্ত করতে হবে।
জর্ডানের ইসলাম অ্যাকশ ফ্রন্ট পার্টির নেতা মুরাদ আদায়লাহ
সরকারের হাতে শহীদ হয়েছেন মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
বন্দিদের নির্জন কারাগারে বন্দি রাখা ও অব্যাহত নিপীড়ন চালানোর পুরনো রেকর্ড রয়েছে মিসরের সরকারের।
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডাব্লিউ
বছরের পর বছর কারাগারে মুরসিকে অনেকটা সময় নিঃসঙ্গ রাখা, পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে না দেয়া, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা ইত্যাদির পর মুরসির মৃত্যু হয়েছে। সংস্থার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পরিচালক সারাহ লেয়াহ হুইটসন বলেন, মুরসির সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের আচরণ ‘ভয়ংকর' ছিল। এর জন্য দায়ীদের তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
নোবেলজয়ী তাওয়াক্কুল কারমান
গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্তির মহান সাধক মুরসির মৃত্যুতে আমার নিজের ও পৃথিবীর সব স্বাধীন মানুষের পক্ষে শোক জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ৬৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ মুরসি সোমবার আদালতে মারা যান। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ২০১৩ সালে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাবন্দী করা হয়। ওই সময়ের সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি ২০১৪ সালে থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন।
টাইমস/জিএস