মানুষ তার মস্তিষ্কের কতটুকু ব্যবহার করে?

আমরা আমাদের চারপাশের জগতকে কিভাবে অনুভব করি তা আমাদের মস্তিষ্ক দ্বারা নির্ধারিত হয়। মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ৩ পাউন্ড এবং এতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন বা তথ্য বহন করে এমন কোষ রয়েছে।

একজন ব্যক্তি তার মস্তিষ্কের কতটা ব্যবহার করে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা তর্ক বিতর্ক রয়েছে, আছে নানা মুনির নানা মত। একটি প্রচলিত মতবাদ হলো মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে থাকে।

মানুষ আসলে তার মস্তিষ্কের কতটুকু ব্যবহার করে?

বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে জানা যাচ্ছে, মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে এটি বহু প্রচলিত বিশ্বাস হলেও বিজ্ঞান নির্ভর সত্য নয়।

অথচ ২০১৩ সালের জরিপ অনুসারে জানা যায়, প্রায় ৬৫ শতাংশ আমেরিকান নাগরিক বিশ্বাস করেন যে মানুষ তার মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করতে সক্ষম।

সাইন্স আমেরিকান-এ দেয়া এক সাক্ষাতকারে নিউরোলজিস্ট ব্যারি গর্ডন এই বিশ্বাসটিকে ‘একটি মিথ মাত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশই প্রায় সর্বদা সক্রিয় থাকে।

১০ শতাংশ মস্তিষ্ক ব্যবহারের এই ভ্রান্ত ধারণাটি ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্স’ এ প্রকাশিত একটি গবেষণাতেও মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছিল।

ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোনান্স ইমেজিং (এফএমআরআই) নামে পরিচিত ‘মস্তিষ্কের সাধারণ ইমেজিং’ কৌশল কোনও ব্যক্তি বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করার সময় মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারে।

এই পদ্ধতিটি এবং অনুরূপ অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা দেখান যে আমাদের মস্তিষ্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়, এমনকি খুব সাধারণ কোনও কাজ করলেও তা হয়ে থাকে। যখন কোনও ব্যক্তি বিশ্রাম নিচ্ছেন বা ঘুমাচ্ছেন তখনও মস্তিষ্কের বিস্তৃত অংশ সক্রিয় থাকে।

তবে যেকোনো সময় মস্তিষ্ক ব্যবহারের পরিমাণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি মূলত কোনও ব্যক্তি কী করছেন বা কী ভাবছেন তার উপরও নির্ভর করে।

মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহারের এই ধারণাটি কোথা থেকে এসেছে?

এই মিথটি ঠিক কীভাবে শুরু হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে এর বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য উত্স রয়েছে। সায়েন্স জার্নালের ১৯০৭ সালের সংস্করণে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে মনোবিজ্ঞানী এবং লেখক উইলিয়াম জেমস যুক্তি সহকারে দাবি করেন যে মানুষ কেবল তাদের মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র একটি অংশ ব্যবহার করে। তবে সেটা কত শতাংশ তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি।

তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ডেল কার্নেগির ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপলস’ বইটিতে এই ১০ শতাংশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মি. কার্নেগি এটি তার কলেজের এক শিক্ষকের মুখে শুনেছেন বলে বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও অনেক বিজ্ঞানীর বিশ্বাস যে, সমস্ত নিউরন মিলে মস্তিষ্কের কোষ সমূহের প্রায় ১০ শতাংশ গঠিত হয়। এই ধারণাটিও মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ ব্যবহারের মিথটি সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে।

পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নিবন্ধ, টিভি প্রোগ্রাম এবং সিনেমাতে এই দাবিটির বহু পুনরাবৃত্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে এই ধারণাটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি বলছে, মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহারের গল্পটি মুখরোচক হলেও বিজ্ঞান নির্ভয় নয়।

তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে।

 

টাইমস/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024
img
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত Mar 28, 2024
img
বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ Mar 28, 2024
img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024