জেনে নিন-কীভাবে বেশি আশাবাদী হবেন!

নতুন এক গবেষণা বলছে, যাদের চেহারায় ইতিবাচক অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে তারা অন্যদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচে। তবে সমস্যা হলো চেহারায় আভিজাত্য কিংবা ইতিবাচক অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়। কেননা এটা কোনো কৃত্রিম বিষয় নয়। জোর করে এটি করা যায় না।

নতুন ওই গবেষণা বলছে, আশাবাদী মানুষেরা অন্যদের তুলনায় বেশিদিন বেঁচে থাকেন। যদিও এই আশাবাদ কিংবা চেহারায় ইতিবাচক অভিব্যক্তি কোনো সারপ্রাইজ বিষয় নয় যে নেতিবাচক চিন্তা ধারার মানুষের মধ্যে সহসা ঢুকে যাবে। কেননা তারা নৈরাশ্যবাদী।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, নূন্যতম আশবাদীদের থেকে যারা বেশি মাত্রায় আশাবাদী তারা ১১ থেকে ১৫ ভাগ বেশিদিন বাঁচে। তাদের বয়স ৮৫ বছর এমন কী এর চেয়েও বেশি হয়ে থাকে।

এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এসব আশাবাদী লোকেরা তাদের আচরণকে সংযত কিংবা উন্নত করার জন্য বেশ পড়াশুনা করেন। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন সাদা চামড়ার বা শেতাঙ্গ এবং তাদের আয়ও নেহাত কম নয়। অর্থাৎ ইতিবাচক চিন্তাভাবনার লোকেরা আয়-ইনকামে যে পিছিয়ে থাকে তা নয়।

তারপরও আশাবাদী হিসেবে কেই বা বাঁচতে না চায়? আশাবাদের সঙ্গে জেনেটিক বা বংশগত বিষয় জড়িত। যমজ বিষয়ক পড়াশুনা থেকে জানা যায় যে, আশাবাদী হওয়ার পেছনে বংশগত কারণ রয়েছে ৪০ ভাগ। যদিও এর তারতম্য হতে পারে।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট লিন্ডা ব্লেয়ার বলেছেন, ‘আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করা এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি শক্তিশালী করে এমন সংস্থাকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে পারেন। তিনি বলেন,‘আপনি যেভাবে আপনার চিন্তাভাবনা বদলেছেন তা কেবল এই সম্পর্কের ভিত্তিতে বলা উচিত নয়। কারণ এটি আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না’।

তারমতে, কালো-সাদা ভাবনার উপর কম নির্ভরশীল হন। ধূসর ছায়া ধারণ করে তারপর চ্যালেঞ্জ করুন। কারণ এটি মাঝামাঝি রয়েছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন; ঘটনাগুলি কী? কেননা উজ্জ্বল পক্ষের দিকে তাকিয়ে যারা সময় কাটায় তাদের সঙ্গে চললে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আশাবাদকে আরো শক্তিশালী করা যায়।

এরিক কিম নামের একজন গবেষণা সহযোগীর মতে, আপনি প্রতিদিন তিনটি জিনিস লিখে কৃতজ্ঞ হন। এবং অন্যের জন্য করা সদয় কাজগুলির একটি নোট রাখেন। যা আপনাকে আরো আশাবাদী হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। সর্বোচ্চ সম্ভব নিজে অনুশীলন করতে পারে যার মধ্যে আপনি নিজের ভবিষ্যতের স্ব-অর্জন কী কী চান তা কল্পনা করেন এবং সেখানে যাওয়ার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সে সম্পর্কে ভাবেন। আপনার উজ্জ্বল দিকগুলো খুঁজে বের করে আনতে মেডিটেশন একটি ভাল উপায় হতে পারে।

অপর গবেষক ব্লেয়ারের মতে, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পর্যাপ্ত ঘুমও একটি বড় ফ্যাক্টর। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে থাকি তখন আমরা সংবেদনশীল হয়ে পড়ি যার অর্থ সাধারণত ভয় হয়। আমরা ভবিষ্যতের কথা ভাবছি এবং কীভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আপনি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তখন যুক্তিযুক্ত হওয়া কঠিন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সারা জীবন জুড়ে রয়েছে- এমন চিন্তাভাবনা বদলাতে সময় এবং যথেষ্ট সচেতন অনুশীলন প্রয়োজন হয়। তার মতে, এক্ষেত্রে একটি ডায়েরি রাখা উচিত। এতে করে দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক দিকটা প্রকাশ পায়। নিয়মিত ডায়েরি যারা রাখেন তাদের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনাকে সংকীর্ণ করা হয়ে ওঠেনা। কোনো পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা উদার এবং যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারেন। ইতিবাচকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

 

টাইমস/এমএস

Share this news on: