উচ্চ মাত্রার ফ্রুকটোজ যুক্ত খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর?

ফলকে মিষ্টতা প্রদান করে যে উপাদান বা ফলে যে প্রাকৃতিক চিনি থাকে তা ফ্রুকটোজ নামে পরিচিত। এছাড়াও মধু এবং বিভিন্ন সবজিতে বিভিন্ন মাত্রায় ফ্রুকটোজ বিদ্যমান। ফল অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার এবং ভিটামিন-খনিজ সহ নানা প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের অন্যতম উৎস। দেহকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখতে নিয়মিত ফল খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের তুলনায় ফল বা সবজিতে এই চিনির পরিমাণ কম হওয়ায় এবং এটি প্রক্রিয়াজাত চিনি না হওয়ায় ফ্রুকটোজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবেই বিবেচিত হয়।
যে সব ফলে ফ্রুকটোজের পরিমাণ বেশি থাকে তা খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে উদ্যম ও উদ্দীপনা লাভ করা যায়। তাই সাধারণত এ জাতীয় ফলের জনপ্রিয়তাও অন্য অনেক ফলের থেকে বেশি।
তবে অতিরিক্ত পরিমাণে উচ্চমাত্রার ফ্রুকটোজ যুক্ত ফল গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতিকালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ফ্রুকটোজ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সঠিক ভাবে কাজ করতে দেয় না।
অন্যদিকে হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ হলো ভুট্টার মাড় থেকে তৈরি এক ধরণের প্রক্রিয়াজাত মিষ্টিকারক যা বিভিন্ন খাবার মিষ্টি করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গত শতাব্দীতে এই বিশেষ মিষ্টিকারকটির প্রচলন ঘটে। তুলনামূলক ভাবে দামে কম হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয় তৈরিতে এর ব্যবহার ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।
গবেষকদের মতে, এই হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ অন্য যেকোনো চিনির তুলনায় বেশি ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরেই গবেষকগণ অতিরিক্ত হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ যুক্ত খাবার গ্রহণের সাথে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজের সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন।
এর সব থেকে বড় সমস্যা হলো অগনিত প্রক্রিয়াজাত খাবারে এটি ব্যবহৃত হয়। সংরক্ষণ করা পিৎজা, বার্গার কিংবা, অন্যকোনো ফাস্টফুড বা এমন অনেক খাবারেই এটি ব্যবহৃত হয়।
ফ্রুকটোজ কিভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে?
এ বিষয়ে নতুন গবেষণাটি ন্যাচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার সাথে যুক্তরাজ্যের সোয়ানসি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল ও ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ যুক্ত ছিলেন।
গবেষণায় দেখা হয়েছে কিভাবে ফ্রুকটোজ মানব ও ইঁদুরের কোষকে প্রভাবিত করে। এতে দেখা গেছে অতিরিক্ত ফ্রুকটোজ গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে দেহে প্রতিক্রিয়াশীল অণু উত্পাদন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
ব্রিস্টল মেডিকেল স্কুলের গবেষক এবং এই গবেষণাপত্রের একজন লেখন এমা ভিনচেট বলেন, “আমাদের এই গবেষণার ফলে কেন কিছু খাবার মানবদেহে অসুস্থতার সৃষ্টি করে সেই বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।”
গবেষকদের আশা এটি মানুষকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/এসএন