সৌদিতে নারীদের না পাঠাতে রাজধানীতে বিক্ষোভ

জীবীকার তাগিদে সৌদি আরবে যাওয়া নারী শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে যৌন হয়রানিসহ নানামূখী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে দেশটিতে আর কোনো নারীকে না পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন নারীরা।

মঙ্গলবার রাজধানীর শহীদ মিনার চত্বরে ‘প্রবাসী নারী শ্রমিকের পাশে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এমন দাবি জানানো হয়। এসময় এ দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসরত নারীদের ওপর চলা বিভিন্ন অত্যাচার ও অনিয়মের কথা তুলে ধরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রবাসে বিশেষ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে নারীরা নানারকম শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও প্রবাসী মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বরং তারা অত্যাচারিত হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীদের দোষারোপ করছে। সৌদি আরব যেতে সরকারিভাবে টাকা না লাগলেও নারীরা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’

প্রবাসে নির্যাতিত নারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে সাহায্য চাইলেও দূতাবাসের কর্মকর্তারা কোনো সাহায্য করে না জানিয়ে তারা আরও বলেন, ‘বরং যাদের পাঠানো টাকা দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করছে তাদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে তারা দ্রুত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ও আর কোনো নারীকে সৌদি আরবে না পাঠানোর দাবি জানান।

পরে শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিমুখে রওয়ানা হলে তা টিএসসি হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এসময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ সদস্যের একটি দল গিয়ে স্মারকলিপি দেয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অভিবাসী কর্মীর মানবিক মর্যাদা ও অধিকারের সুরক্ষায় প্রণীত আন্তর্জাতিক ঘোষণানীতি-সনদ-চুক্তি যে সকল রাষ্ট্র অনুসরণ করে না বা করবে না, সে সকল রাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী কর্মী প্রেরণ করা চলবে না এবং ওইসব দেশের সঙ্গে বিদ্যমান অভিবাসী কর্মী প্রেরণের সকল প্রকার সমঝোতা স্মারক-চুক্তি বাতিল, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে নারী অভিবাসী কর্মী প্রেরণ করা হয়েছে, সেখানে নারী অভিবাসী কর্মীদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ, অনতিবিলম্বে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে নারী অভিবাসী কর্মী পাঠানো হয়েছে, সে সকল দেশে কর্মরত নারী কর্মীদের নিয়োগকর্তার নাম, কর্মস্থলের ঠিকানাসহ নারীকর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার তথ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ অভিবাসী কর্মীর পরিবারের কাছে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য দিতে হেল্প ডেস্ক চালু করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ইতোমধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে যেসব নারী কর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন, আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছেন এমনকি দেশে ফিরে এসেছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, নারী কর্মীদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের তথ্য জানার পরও দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান করে নির্যাতনকারীর পক্ষাবলম্বন করেছেন, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

 

টাইমস/এমএস

Share this news on: