তিন সিগন্যালের একটিও টের পায়নি তূর্ণা-নিশীথার চালক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনার সময় তূর্ণা নিশীথার চালকরা ঘুমে ছিলেন বলে ধারণা করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে চালকদের পরপর তিনটি সিগন্যাল ভাঙাকে দায়ী করছেন তারা।

সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে কসবার মন্দবাগ রেল স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

দুর্ঘটনার সময় ‘তূর্ণা নিশীথা’ অটো ব্রেকে ছিল বলে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়াদের বরাত দিয়ে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা।

এই কর্মকর্তা জানান, মূলত বিরতিহীন ট্রেন হওয়ায় অটো ব্রেকে রেখেই লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টার হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তূর্ণাকে আউটারে থাকতে তিনটি সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল মন্দবাগ রেল স্টেশন থেকে।

দুইজন চালক একটি সিগন্যালও কেন দেখলোনা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এর বাইরে আউটার, হোম, স্টার্টারসহ বেশ কিছু কারিগরি প্রক্রিয়া আছে। এসবের কোনোটাতেই তূর্ণা নিশীথার চালকরা সারা দেয়নি। প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে উদয়ন এক্সপ্রেসকে আঘাত করে তূর্ণা নিশীথা। দুই মিনিট অপেক্ষা করলেও এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান জানান, কুমিল্লা থেকে আখাউড়া রেললাইনটি সিঙ্গেল হওয়ায় সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে ‘উদয়ন’ ট্রেনকে স্টেশনে অপেক্ষায় রেখে ‘তূর্ণা নিশীথা’কে যেতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আরও সিদ্ধান্ত ছিল ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ স্টেশনে প্রবেশের আগ পর্যন্ত মন্দবাগ স্টেশনের আউটারে থাকবে ‘তূর্ণা-নিশীথা’। 

তিনি বলেন, তিনটি সিগন্যাল অমান্য করে ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে উদয়নে আঘাত করে তূর্ণা-নিশীথা।

‘তূর্ণা নিশীথা’র চালক ও তার সহকারীর দায়িত্বহীনতার কারণে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ঘটনার পর থেকে তূর্ণা নিশীথার লোকোমাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে ও ওয়ার্কিং গার্ড আব্দুর রহমান পলাতক আছেন। ইতোমধ্যে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমোটিভ মাস্টার সিগন্যাল ভঙ্গ করে উদয়নকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উপপরিচালক (জনসংযোগ) তৌষিয়া আহমেদ।

তৌষিয়া আহমেদ জানান, এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি রেলপথ পরিদর্শক নিজে পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: