থাইল্যান্ড ভ্রমণ: সমুদ্র সৈকত এবং রাতের পাতায়া (পর্ব-২)

ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট নেমে পাতায়া যাওয়ার গাড়ি বাংলাদেশ থেকেই বুক করা ছিল। তবে গাড়ি বুক করা যে কতটা ঝামেলা তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। প্লেন থেকে নেমে যখন ইমিগ্রেশনের ঝক্কি ঝামেলা শেষে ফ্রি হলাম, তখন আর বুক করা গাড়ি খুঁজে পেলাম না। হোয়াটসঅ্যাপেও কোনোভাবে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। প্রায় ১ ঘণ্টা পর চালকের দেখা পেলাম। এরপর শুরু হয় পাতায়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা। তবে যাত্রাপথে বাইরের দৃশ্য খুব একটা দেখতে পেলাম না। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে কুপোকাত হয়ে গেলাম।

ব্যাংকক থেকে পাতায়া শহরে যেতে আমাদের প্রায় দুই ঘণ্টা লেগেছে। সেখানে হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল। রুমে এসেই বারান্দা দিয়ে অপূর্ব সুন্দর ও ঝকঝকে পাতায়াকে দেখছিলাম। কী বিচিত্র প্রকৃতি, বিচিত্র তার রূপ! ফ্রেশ হয়েই খাবারের জন্য বেড়িয়ে গেলাম। পাতায়া শহরে একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম- এখানে প্রচুর বিউটি স্যালন বা মাসাজ পার্লার। ৫ মিনিটের হাঁটার পথে ৭-৮টি বিউটি স্যালন বা মাসাজ পার্লার দেখা মিলল। আর মেয়েরা অনেক সেজেগুজে বাইরে বসে থাকেন।

এছাড়াও লক্ষণীয়, এখানে বাঙালি, ইন্ডিয়ান ও হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা একটি বাঙালি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম, দেখলাম সেখানকার মানুষজন বড়ই আন্তরিক। আমি নিজের জন্য থাইল্যান্ডের বিখ্যাত খাবার 'প্যাড থাই' অর্ডার করলাম,আম্মু ফ্রাইড রাইস উইথ শ্রিম্প এবং বাবা বাঙালী খাবার অর্ডার করলেন।

খাওয়া পর্ব শেষে মূল আকর্ষণের পালা, তা হলো সমুদ্র দর্শন। সমুদ্র বরাবরই আমায় কাছে টানে। তাই আমরাও হারিয়ে গেলাম চীন সাগরে (Gulf of Thailand) অজানা আনন্দে। অনেক ছবি তুললাম। আমি একা, আমি আর বাবা, আমি আর মা এবং বাবা আর মা এভাবে করে ছবি তুলেছি। কিন্তু তিনজন একত্রে ছবি তোলার বিশেষ দরকার। সেজন্যে চাইনিজ এক তরুণীকে গিয়ে অনুরোধ করলাম; সেই তরুণী খুবই মিশুক, অনেকক্ষণ আড্ডা হলো তার সঙ্গে।

ইউটিউবে দেখেছিলাম চাইনিজরা হাত দিয়ে হার্ট বানিয়ে ছবি তোলে, আজ নিজের চোখে দেখলাম, তিনি আমাকে শিখিয়েও দিলেন এই স্টাইলটা। আমরা সেই স্টাইলে ছবি তুললাম। কিছুক্ষণের মাঝেই বুঝলাম কেডস পড়ে থাকা যাচ্ছে না। একটি দোকানে ঢুকে স্যান্ডেল কেনার জন্য আব্বু আম্মু বেশ দর কষাকষি করলেন।

একটা জিনিস খেয়াল করলাম, ট্যুরিস্ট প্লেসগুলোতে দাম ১০ গুণ বাড়িয়ে বলে। এর আগেও যতগুলো ট্যুরিস্ট প্লেসে গিয়েছি, একই বিষয় লক্ষ্য করেছি। স্যান্ডেলগুলো কেনার পর আবার সমুদ্রে ফিরে গিয়েছি। সেখানে লম্বা সময় কাটানোর পর রুমে ফিরে যাই। রুমে বসে ২০ মিনিটের মধ্যে 'থাইল্যান্ড ভ্রমণ পর্ব-১' লিখলাম। তারপর দিলাম এক ঘুম।

সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে দেখতে আসলাম রাতের পাতায়া শহর। পুরো শহর যেনো আলোতে ঝলমল করছে। এ এক অন্যরকম রূপ, যা দিনের পাতায়ার সঙ্গে রাতের ঝলমলে আলোর পাতায়াকে আলাদা করে। তবে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে এ শহর খাপ খায় না।

খাওয়া দাওয়া করলাম একটি ইন্ডিয়ান হালাল রেস্টুরেন্টে। আমি খেলাম স্প্যাগেটি বোলোনিজ আর আব্বু-আম্মু খেলেন নান ও চিকেন কারি। অনেক সুস্বাদু ছিল খাবারগুলো। তারপরই এক কাপ মজার দুধ চা পান করে খাবার পর্ব শেষ করলাম। এরপরই ঝকঝকে শহরে টুকটাক কেনাকাটার পর্ব চলল।

তারপর আবার সমুদ্রের কাছে ফিরে গেলাম। রাতের সমুদ্রটা কেমন জানি। কিছু একটা বলতে চায়; এরকম লাগে আমার কাছে। রাতের সমুদ্র দিনের সমুদ্রের চেয়েও অপরূপ সুন্দর। এ সৌন্দর্য শুধু যারা রাতের সমুদ্র দেখেছেন, তারাই অনুভব করতে পারবেন। সবচেয়ে ভালো লাগছিলো আমরা তিনজন যখন নিরিবিলি সমুদ্রের পাড়ে হাঁটছিলাম। মনে হচ্ছিল আমাদের কোনো দুঃখ নেই, সব দুঃখ সমুদ্র নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে আনন্দ। কেমন যেনো ভালোবাসায় সিক্ত করে এই সমুদ্রের গর্জন। সবশেষে রাতে স্মোকড কোরাল ফিশ খেয়ে ফিরে এলাম রুমে।

দিনটা সত্যিই অনেক সুন্দর ছিল। এমন দিন যদি প্রতিদিনই আসতো কতই না ভালো হতো। এই গল্পের পরবর্তী পর্ব ঘোরাঘুরির পর লেখা হবে।
চলবে...

থাইল্যান্ড ভ্রমণ পর্ব-১

লেখক: শিক্ষার্থী, সংগীত বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: