নকশা অনুমোদনে রাজউকের অনিয়ম : অভিযোগকে মিথ্যা বলছেন মন্ত্রী

ভবনের নকশা ও ছাড়পত্র অনুমোদনে দালালদের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে আগেই চুক্তি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, স্থানীয় দালাল ও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে এই চুক্তি হয়ে থাকে। নির্ধারিত হারে অর্থ লেনদেনের জন্যই মূলত এই চুক্তি। যদি কোনো গ্রাহক দালালদের হাত ধরে চুক্তি অনুযায়ী না চলেন তবে ভবনের নকশা ও ছাড়পত্র পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এধরণের একাধিক অভিযোগ সম্বলিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তবে টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

বুধবার ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক): সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন টিআইবির ডেপুটি ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফাতেমা আফরোজ এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষণা ও পলিসি) ফারহানা রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি পরিচালক মোহম্মাদ রফিকুল হাসান প্রমুখ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউকে ছাড়পত্র অনুমোদনে ঘুষের পরিমাণের নির্ধারকগুলো হচ্ছে রাস্তার প্রস্থ, জমির পরিমাণ, জমির ব্যবহার, জমির অবস্থান বা এলাকা, সেবাগ্রহীতার ধরন। এছাড়া সেবাগ্রহীতা অনেক সময় বহিরাগত দালালদের মাধ্যমে হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের শিকার হয়ে থাকেন। আবার জরিপের সময়ও চুক্তিভিত্তিক নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত দেখানোর জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। ছাড়পত্র অনুমোদনে ব্যক্তি পর্যায়ে ১৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত এবং রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।

এছাড়া ছাড়পত্র অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ, নকশা অনুমোদনে অনিয়ম ও সময়ক্ষেপণ, সরেজমিন পরিদর্শনের নামে সেবা গ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি করার দিক তুলে ধরে টিআইবি। এসব হয়রানি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআইবির পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশও দেয়া হয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

এদিকে রাজউকের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলছেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে রাজউককে হেয় করে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছে টিআইবি। বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্রে টিআইবির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে সংবাদ এসেছে সেখান থেকে আমি অবহিত হয়েছি- রাজউকে সেবা নিতে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ লাগে। এই বক্তব্যটি কোনোভাবে সত্য নয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মন্ত্রী বলেন, তাদের এই অভিযোগের কী ভিত্তি, সেই ভিত্তি কোথায়? তারা সুস্পষ্টভাবে বলেনি।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, একটি অভিযোগে তারা বলেছেন বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল স্টেট ডেভেলপারকে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। টিআইবির এ বক্তব্যে আমি বলতে চাই, আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ জাতীয় কোনো প্রকল্পের অনুমোদনই দেয়া হয়নি। তাহলে এই অনিয়ম তারা কোথায় পেলেন?

টিআইবির সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মন্ত্রী আরও বলেন, বিশেষ প্রকল্পে ১৫ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে যে তথ্য টিআইবি দিয়েছে তা যে শতভাগ মিথ্যা তা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। কারণ যে প্রকল্পে দুর্নীতির কথা তারা বলেছেন, সে প্রকল্প তো এখনো পাস করাই হয়নি।

 

টাইমস/এসএন/এইচইউ

Share this news on: