গাজীপুরের শ্রীপুরে তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে আবদুর রহমান (৪৫) নামের এক ব্যক্তির তোশকে মোড়ানো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্ত্রী সামিরা ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের একটি দল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিহত আব্দুর রহমানের স্ত্রী সামিরা আক্তার (২৬) এবং তার বাবা গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার ছামিদুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মৃৃত ফজলুল হকের ছেলে আলী হোসেন (৫৫)।
মঙ্গলবার র্যাব-১ এর পোড়াবাড়ি ক্যাম্প কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌনকাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা ও নানান অত্যাচারের কারণে স্বামীকে হত্যা করেন বলে বলে জানিয়েছেন ওই নারী।
র্যাব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীপুর পৌরসভা কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকায় তৃতীয় তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ, ক্রাইমসিন ইউনিট এবং সিআইডির উপস্থিতিতে জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের ঝলসানো গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে নিহতের স্ত্রী সামিরা পলাতক ছিলেন। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। সেখান থেকে ভিকটিম রহমানের ৪র্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার ও তার বাবা আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার সামিরার বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী সামিরা। ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়িক অংশীদার রতনের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করান স্বামী আব্দুর রহমান। ওই দিন রাত ১১টার দিকে রতন তাদের বাসা থেকে চলে যান। পরিকল্পনা করে রাত ৩টার দিকে বাসায় থাকা ধারাল দা দিয়ে আব্দুর রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করেন সামিরা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আব্দুর রহমানের মরদেহ তোশকে মুড়িয়ে ঘরের ভেতর রেখে দেন। মৃত্যুর পর যাতে মরদেহ চিহ্নিত করতে না পারে সেজন্য মুখমণ্ডল অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেন তিনি।
হত্যার পর তিনদিন সামিরা মরদেহ নিয়ে একই বাসায় থাকেন। মরদেহ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহায়তায় বাসা থেকে পালিয়ে যান। কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়ী এলাকার এক বান্ধবীর বাসায় দুদিন আত্মগোপন করার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় মামার বাসায় যান সামিরা। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন তিনি। অবশেষে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেন।
র্যাব জানায়, আব্দুর রহমান ও সামিরার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় পূর্বপরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালে আব্দুর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বসবাস করতেন। সামিরা টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন। দুজন পূর্বপরিচিত হওয়ায় আব্দুর রহমানের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতেন সামিরা। এরই মধ্যে সামিরাকে বিভিন্নভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আব্দুর রহমান। এরপর কৌশলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে সামিরাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আব্দুর রহমান। একই সঙ্গে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ধর্ষণের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন চলে ধর্ষণ।
ওই ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ পেলে সামিরাকে ডিভোর্স দেন স্বামী। পরে সামিরা উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একটি ফার্মেসি পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সামিরাকে বিয়ে করে কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন আব্দুর রহমান।
র্যাব আরও জানায়, তাদের বিয়ের পর থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত আব্দুর রহমান তার ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনও টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স চাইলে সামিরাসহ তার মা-ভাইকে হত্যার হুমকি দেন। এসব ঘটনায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আব্দুর রহমানকে খুন করেন সামিরা।
র্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূলত যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আব্দুর রহমানকে খুন করেন সামিরা। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গাজীপুরে তালাবদ্ধ ঘরে মিলল তোশকে মোড়ানো লাশ
টাইমস/এইচইউ