মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নগদ আড়াই হাজার টাকা অর্থ সহায়তার তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে একই মোবাইল নম্বর সর্বোচ্চ ২০০ বার ব্যবহার করেছিলেন হবিগঞ্জের এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। তার নাম রফিকুল ইসলাম মলাই। তিনি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওই চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নে ইউপি চেয়ারম্যান মলাইয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এ মর্মে সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসক। অপরাধমূলক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে ওই চেয়ারম্যান দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুড়িয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাইকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
এর আগে গত ১৬ মে চেয়ারম্যানের এই প্রতারণার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে শুরু হয় তোলপাড়। স্থানীয়ভাবে তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তদন্তের দায়িত্ব পান হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম। অবশেষে এর প্রায় ২০ দিন পর অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় করোনা ভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি ইউনিয়নে ছয় হাজার ৭২০টি পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার করে টাকা সরকারি অর্থ সহায়তার কর্মসূচি নেওয়া হয়। এরমধ্যে মুড়িয়াউক ইউনিয়নের এক হাজার ১৭৬ জনের খসড়া তালিকা লাখাই উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন সংশিষ্ট জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কেবল চারটি মোবাইল নম্বরের আওতায় মুড়িয়াউক ইউনিয়নে ৩০৬ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। আবার এসব নম্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাইয়ের ঘনিষ্টজনদের। এছাড়া তালিকায় যুক্ত হয় অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়স্বজনের নামও। আছে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নামও।
শুধু তা-ই নয়, একটি ওয়ার্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস না থাকলেও লেখা হয়েছে তাদের নাম। অসংখ্যবার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলো হলো- ০১৯৪৪৬০৫১৯৩, ০১৭৪৪১৪৯২৩৪, ০১৭৮৬৩৭৪৩৯১ ও ০১৭৬৬৩৮০২৮৪। এছাড়া আরও ৩০টি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ জনের নামের পাশে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের কম্পিউটার অপারেটররা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অসম্পন্ন খসড়া তালিকা দিয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তা সম্পন্ন করি। ভুলবশত একেকটি নম্বর অনেকবার ব্যবহার হয়েছে। এরমধ্যে একটি নম্বর সর্বোচ্চ ২০০ নামের বিপরীতে ব্যবহার হয়েছে।
টাইমস/এইচইউ