ঈদের ছুটিতে প্রাণ গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ মেধাবী শিক্ষার্থীর

এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে ঝরে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ। এরমধ্যে ফুটবল খেলতে গিয়ে মারা গেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটর ছাত্র সাকিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিঠুন বিশ্বাস করোনাতংকে ব্রেইনস্ট্রোক করে মারা গেছেন।জাহাজ থেকে পড়ে মারা গেছেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র নাঈম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুপ্রিয়া বয়ফ্রেন্ডের শোকে আত্মহত্যা করেছেন। তার বয়ফ্রেন্ড কুয়েটের ছাত্রও একই রাস্তায় হেঁটেছেন। এছাড়া পানিতে ডুবে মারা গেছেন নর্দান ইউনিভার্সিটির ছাত্র শরিফ খাঁন।

মিঠুন বিশ্বাস : নভেল করোনাভাইরাসের আতংকে ব্রেইনস্ট্রোক করে মারা গেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ থাকায় আতংকের মধ্যে ছিলেন মিঠুন বিশ্বাস নামে ওই ছাত্র। একপর্যায়ে টয়লেটে গেলে ব্রেইনস্ট্রোক করে সেখানে তিনি পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মারা যান। তবে তাকে দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, মিঠুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ থানায়। মিঠুনের ভাই সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ০৩ আগস্ট সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) তিনি মারা যান।

সুমন বলেন, মিঠুনের প্রথমে জ্বর ছিল। একদিন হঠাৎ করোনা আতঙ্কে ব্রেন স্ট্রোক করে টয়লেটে পড়ে যায় সে। ১২ জুলাই তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। এরপর অবস্থার অবনতি দেখে ১৩ জুলাই সকালে যশোর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। তবে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে দীর্ঘক্ষণ ভর্তি নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে ২২ ঘণ্টা পর তাকে ভর্তি নেয় এবং তখন আইসিইউ সাপোর্টও পায় সে। এরপর পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যায় মিঠুন।

ইয়াসিন আলি সাকিন : বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন ইয়াসিন আলি সাকিন। ঈদের পরদিন এলাকায় প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। শখের বশেই খেলায় অংশ নেন সাকিন। ওই খেলা পরিচালনা করছিলেন সাকিনের বাবা হামিদুল ইসলাম। ফুটবল খেলার একপর্যায়ে হঠাৎ বুকের ব্যথায় বাবার সামনেই লুটিয়ে পড়েন সাকিন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে জয়পুরহাটে। সাকিন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

জানা গেছে, প্রতি বছর ঈদুল আজহার পর করিমনগরের পরিত্যক্ত একটি ইটভাটায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে স্থানীয় গ্রামবাসী। তারই ধারাবাহিকতায় ০২ আগস্ট রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় ফুটবল খেলা শুরু হলে সাকিন তাতে অংশ নেন। খেলা পরিচালনা করেন সাকিনের বাবা হামিদুল ইসলাম। খেলা চলাকালে ৫টার দিকে সাকিন হঠাৎ করে মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পরে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাড়ে ৫টার দিকে সাকিন মারা যায়।

নাঈম : জাহাজ থেকে কর্ণফুলি নদীতে পড়ে নিখোঁজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাইম মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র ছিলেন। চট্টগ্রামের ফিসারিঘাট এলাকা থেকে বুধবার নাইম নামে ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, ঈদের ০২ আগস্ট কর্ণফুলির সাইলো পয়েন্টে জাহাজ থেকে পড়ে নিখোঁজ ছিলেন নাইম। পরে ফিসারিঘাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ডুবুরিরা।

সুপ্রিয়া দাস : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুপ্রিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি গণিত বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ০১ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের নিজ বাসায় তিনি আত্মহত্যা করেন। জানা গেছে, গত ১৫ জুন সুপ্রিয়ার প্রেমিক তপু মজুমদার আত্মহত্যা করে। তিনি কুয়েট শিক্ষার্থী ছিলেন। এর দেড় মাসের মাথায় এই ঘটনা ঘটল।

সুপ্রিয়া দাসের সহপাঠীরা জানান, কুয়েটের শিক্ষার্থী তপু মজুমদারের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুপ্রিয়ার। দুজনের বাসা একই এলাকায়। উভয় পরিবার মেনে নিয়েছিল দুজনের সম্পর্ক। করোনার মধ্যেও সুপ্রিয়ার বাসায় এসেছিল তপু মজুমদার। গত ১৪ জুন রাতে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। কান্না করতে করতে সুপ্রিয়া ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় অনেক এসএমএস। তাৎক্ষণিক ফোন করে জানতে পারে তপু আত্মহত্যা করেছে।

তারা জানান, এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সুপ্রিয়া। তপু আত্মহত্যার জন্য সামাজিকভাবে তাকে দোষারোপসহ নানান কটূক্তি করা হয়। সামাজিক ও মানসিক চাপেই সুপ্রিয়া আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করেন তার কাছের বন্ধুরা।

শরিফ খাঁন : ব্রহ্মপুত্র নদে সাঁতার শিখতে গিয়ে ঈদের পরদিন ০২ আগস্ট রোববার রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। রোববার নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বটিবন্দ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শরিফ খাঁন। তিনি নারায়নপুর ইউনিয়নের বটিবন্দ গ্রামের বুলবুল খাঁনের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শরিফ দুপুর সাড়ে ১২ দিকে উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বটিবন্দ গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদে সাঁতার শিখতে যায়। সেখানে সে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on: