মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বদলে গেছে সারা পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা। এই ভাইরাসের ছোবলে স্থবির হয়ে পড়েছে পৃথিবী। অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি মুখ থুবড়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা সচল করতে সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। অনলাইন ক্লাসে যোগদানে চাই কম্পিউটার অথবা স্মার্ট মোবাইল ফোন। কিন্তু হতদরিদ্র ও বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারের শিশুদের এসব মূল্যবান সামগ্রী যোগাড় করে ক্লাস করা সম্ভব নয়। এতে হতাশা বিরাজ করছে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভবাকদের মাঝেও।
এমন পরিস্থিতিতে মাগুরায় হতদরিদ্র ও বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে এগিয়ে এসেছে ‘অদম্য পাঠশালা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শহরের দুটি স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আড়াই মাস ধরে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে লেখাপড়া করাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি। এই পাঠদানের ফলে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উপকৃত হচ্ছে। স্বেচ্ছায় এই পাঠদান কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, অভিভাবকসহ জেলার সচেতন নাগরিকরা।
অদম্য পাঠশালার প্রধান সমন্বয়ক প্রকৌশলী সম্পা বসু বলেন, করোনার পর থেকে সরাদেশের মতো মাগুরার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। যে কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। তবে সম্প্রতি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু বাড়িতে টেলিভিশন বা আধুনিক মোবাইল ফোন না থাকায় শহরের হতদরিদ্র ও বস্তিবাসী পরিবারের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সকল শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে না পড়ে, এজন্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অধ্যায়নরত যারা, করোনার কারণে বর্তমানে মাগুরায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী মিলে গত আড়াই মাস ধরে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় সর্দার পাড়া ও নিজনান্দুয়ালী চরপাড়া এলাকায় অদম্য পাঠশালা নামে দুটি অস্থায়ী স্কুল স্থাপন করেছেন।
যেখানে তারা শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয় দিন প্রায় শতাধিক হতদরিদ্র পবিারের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শিখিয়ে আসছেন। প্রথম থেকে দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনা বেতনে এখানে লেখোপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। অদম্য পাঠশালার পক্ষ থেকে এ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই, খাতা, কলমসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণও প্রদান করা হচ্ছে। তাদের এ পাঠদান কার্যক্রমের ফলে হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অনেক উৎসাহী ও অগ্রগামী হয়েছে।
ঐশি বিশ্বাস, কেয়া বিশ্বাস, ইমরান কবীর ও রোকসানা আক্তারসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, করোনার কারণে টানা কয়েক মাস স্কুল বন্ধ। যে কারণে তাদের লেখাপড়া একবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এদিকে স্মার্ট ফোন বা বাড়িতে টেলিভিশন না থাকায় তারা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছিলো না। কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে অদম্য পাঠশালার স্যার-ম্যাডামরা নিয়মতি তাদের পাঠদান করাচ্ছেন। এতে তারা লেখাপড়ায় অনেক উন্নতি করতে পেরেছে।
দোয়ারপাড়া ও চরপাড়া এলাকার বাসন্তী বিশ্বাস, উমা রানী, বিপুল বিশ্বাসসহ অভিভাবকরা বলেন, করোনার কারণে কাজ না থাকায় সংসার অচল হয়ে পড়েছে। এবস্থায় প্রাইভেট পড়ানোর সার্মথ্য তাদের নেই। স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধের পথে। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে অদম্য পাঠশালার স্যারেরা তাদের ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। শুধু লেখাপড়া শেখানো নয়, তারা এ জন্য প্রয়োজনীয় বই, খাতা, কলম পর্যন্ত সরবরাহ করছেন। এতে করোনার মধ্যেও তাদের ছেলেমেয়েরা ভালভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে।
জেলার প্রবীণ শিক্ষাবিদ ভাষা সৈনিক খান জিয়াউল হক ও সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোল্লা সাইদুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে হতদরিদ্র পবিরারের সন্তানদের অদম্য পাঠশালার নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা লেখাপড়া শেখাচ্ছে, এটা একটি মহতী উদ্যোগ। তারা এই শিক্ষা কর্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা মনে করেন, এই দুর্যোগের সময়ে এটি সারাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য একটি মডেল হতে পারে।
টাইমস/এসএ/এসএন