প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বইয়ের আবেদন কখনো কমবে না। বইমেলা শুধু বই বেচাকেনা নয়। এখানে লেখক-পাঠক-বইপ্রেমীদের মিলনমেলা ঘটে। এটি বাঙালির প্রাণের মেলা।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। একদিন বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাড়াবে। এই দেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বসাহিত্যকে জানতে আরও অনুবাদ প্রয়োজন। এই বাঙালির ইতিহাস ত্যাগের। এই ভাষা আন্দোলন সহ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই বাঙালির সব অর্জন।
বইমেলার প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন প্রায়ই বইমেলায় আসতাম। এখনতো সরকারে বলে অনেকটা বন্দী জীবনেই থাকতে হয়। নিরাপত্তার কারণে অন্যের যেন সাধারণের যেন অসুবিধা না হয়, সেজন্য আসি না। তবু সবসময় বইমেলায়ই মন পড়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেই। তাই পহেলা জানুয়ারিতেই সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই তুলে দেই।
বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তো সব ডিজিটাল হয়ে গেছে। মোবাইল বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসে বই পড়ে সবাই। কিন্তু আমরা যত যান্ত্রিকভাবেই বই পড়ি না কেন, নতুন মলাট খুলে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বই পড়ার যে আনন্দ, সেটা অনুভব করা যায় না। অবশ্য অনলাইনে বই থাকলে সবার কাছে পৌঁছানো যায়, সেটাও জরুরি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো নিয়ে সংকলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচনও করেন। বইটির মোট ১৪ খণ্ড প্রকাশিত হবে। গত সেপ্টেম্বরেই গণভবনে প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু, ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিশরীয় লেখক-গবেষক মোহসেন আল আরিশি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আয়োজন মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত ২০১৮ এর চার কবি-সাহিত্যিকের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
এবার কবিতায় কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে আফসান চৌধুরী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে দুই লাখ টাকার চেক, একটি করে সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা পদক দেওয়া হয়।
এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং তার প্রিয় কিছু বই ক্রয় করেন। আর শুক্রবার বিকেল পাঁচটার পর মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এই মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বই ঘরগুলোতে শত শত মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলা একাডেমি থেকে জানানো হয়েছে, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘বিজয়: বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নবপর্যায়)’। একইসঙ্গে ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যাত্রাও শুরু হবে এই মেলা থেকে।
প্রতিবছরের মতো এবারও মেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইয়ের দোকানগুলো। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
টাইমস/টিআর/এক্স