সিবিএ নেতার দখলে সরকারি পাজেরো ১০ বছর পর উদ্ধার!

ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১০ বছর ধরে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া।

পিডিবির অবসরপ্রাপ্ত স্টেনো টাইপিস্ট আলাউদ্দিন মিয়া একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। গাড়ির পেছনে চালকের বেতন বাবদ সরকারের কোষাগার থেকে প্রতিমাসে ৩৭ হাজার টাকা খরচ করেছেন। জ্বালানি বাবদও প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা খরচ করেন।

ওই পাজেরো গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২৮২৭) যুগ্মসচিব মর্যাদার কর্মকর্তারাই কেবল ব্যবহার করতে পারেন।

অথচ সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ সব খরচ তাকে দিয়েছে পিডিবি। এক বছর আগে অবসরে যাওয়ার পরও গাড়িটি ছিল আলাউদ্দিনের দখলে।

সোমবার অভিযান চালিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী জানান, আলাউদ্দিন মিয়া ২০১৭ সালের আগস্টে অবসরে যান। তিনি তখন পিডিবির নকশা ও পরিদর্শন পরিদফতরের স্টেনো টাইপিস্ট পদে ছিলেন। আগস্টে তার অবসরোত্তর ছুটির (পিআরএল) সময়সীমাও শেষ হয়েছে। তারপরও তিনি অবৈধভাবে গাড়িটি ব্যবহার করে আসছিলেন।

এই গাড়িটি সার্বক্ষণিকভাবে আলাউদ্দিন মিয়া ও তার পরিবার ব্যবহার করত। গাড়ি ব্যবহারের এখতিয়ার না থাকলেও সিবিএ নেতা হওয়ার দাপটে তিনি গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বলে পিডিবির কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, গাড়ির জন্য প্রতিদিন ১৫ লিটার ডিজেল পেয়েছেন প্রতিষ্ঠান থেকে। এ হিসেবে ১০ বছরে তিনি ৩৫ লাখ টাকার জ্বালানি ব্যবহার করেছেন। এই সময়ে চালকের বেতন বাবদ পিডিবিকে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণসহ সব মিলিয়ে আলাউদ্দিন মিয়া অবৈধভাবে গাড়ির জন্য সরকারের ব্যয় করেছেন কোটি টাকারও বেশি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গোপনীয়তার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান শেষে দুপুরে দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান এনফোর্সমেন্ট অভিযানের সমন্বয়ক ও দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ওই গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। গাড়ি উদ্ধারের সময় এর চালক ছাড়া কেউ ছিলেন না। চালকের বক্তব্য রেকর্ড করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, গাড়িটি পিডিবির নামে বরাদ্দ থাকলেও ওই কর্মচারী কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৭ সালে অবসরে গেছেন।

জানা গেছে, আলাউদ্দিন মিয়া গাড়িটি ব্যবহার করলেও গাড়ির লগবইয়ে সই করতেন সিবিএর দফতর সম্পাদক নুরে আলম ফেরদৌস। আইনত যিনি গাড়ি ব্যবহার করেন তাকেই লগবইয়ে সই করতে হয়।

এই ঘটনাকে দুদকের আওতাভুক্ত এটি একটি ‘বড় অপরাধ’ হিসেবে মন্তব্য করে দুদক মহাপরিচালক বলেন, তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর নামে গাড়িটি কীভাবে বরাদ্দ দেয়া হলো, এর সঙ্গে পিডিবি বা অন্য কোনো অফিসার জড়িত তা অনুসন্ধানের মাধ্যমে বের করা হবে। তখন সেই অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে পিডিবির কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে, অনুশাসনে ব্যর্থতা আছে।

এ ঘটনায় মামলার করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অনুসন্ধান করব। ওই কর্মচারীর সম্পদও খতিয়ে দেখা হবে। অনুসন্ধানের জন্য গাড়িটি দুদকে আনা হয়েছে। পরে পিডিবির কাছে গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। তবে অনুসন্ধান চলাকালীন কেউ গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, পিডিবির সিবিএর আরেক সিনিয়র নেতাও সংস্থাটির আরেকটি পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

 

টাইমস/জেডটি

Share this news on: